পোস্টগুলি

স্বপ্নের ডানায়

ছবি
  🌌 স্বপ্নের ডানায় — নিতাই বাবু যখন ঘুমিয়ে পড়ি নিঃশব্দ রাতে, দেহ পড়ে থাকে চুপচাপ প্রহরপাতে। আমি উড়ে যাই— একা, নিঃশঙ্ক মনে, মহাকাশের মেঘের পাহাড় জোছনার বনে। ফেলে আসা পৃথিবীর শব্দহীন ঘর, দেহের খাঁচা ভুলে, ডানা মেলে পরপর। ওখানে নেই দুঃখ, নেই হিসেবের হিস্যা, শুধু এক পাখি আমি, নীহারিকা বিষ্টা। তারা তারা জ্বলে, জেগে থাকে আকাশ, চাঁদের কোলে নিই আমি প্রশান্তির আশ। স্বপ্নের ভিতর দেখি অন্য এক পথ, যেখানে নেই হিংসা, নেই স্বার্থলিপ্ত মোহ। জীবনের ব্যথা, ক্ষোভ, বেদনার ব্যাকুলতা, ওখানে সব সয়ে যায় এক মধুর নিস্তব্ধতা। কে আমি, কোথা থেকে এলাম— এসব ভুলে, উড়ি আমি নির্ভার, হৃদয়ের গহীনে ঢুকে। জানি না কতক্ষণ থাকি ঐ উড়ানে, ক্ষণিকের ঘোরে পাই আমি শান্তির টানে। তারপর হঠাৎ ভোর হয়, ভাঙে ঘুমের পর্দা, আবার ফিরি আমি দেহে— ভোরের ছায়া ধরে। তবু রয়ে যায় বুকের ভেতর একটা শিহরণ— একটুখানি আলো, যা বলে— "স্বপ্ন শুধু ঘুম নয়, এ জীবনেরও এক গোপন চলোচলা!" ...

শ্মশানের নীরবতা: অহংকারের ছাইচাপা শিক্ষা

ছবি
  🪔 শ্মশানের নীরবতা: অহংকারের ছাইচাপা শিক্ষা একদিন গুরু বলেছিলেন— "যখন সময় পাবি, শ্মশানে আছিস— দেখবি কত অহংকার পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।" সে উপদেশ আজও কানে বাজে। সত্যিই তো! এই দুনিয়ার সব চাহিদা, লোভ, ক্রোধ, হিংসা, দম্ভ— সবই তো এক মুঠো ছাইয়ে শেষ হয়ে যায়। সেখানে নেই কোনো জাত-বর্ণের পার্থক্য, নেই ধনী-গরিবের ভেদাভেদ। চিতা যখন জ্বলে ওঠে, তখন সকলের দেহই একইভাবে পুড়ে ছাই হয়। সেই ছাইভস্ম বাতাসে উড়ে চলে যায়, যেখানে আর কেউ ফিরে তাকায় না। জীবনের এই নির্মম সত্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে, অন্তরের অন্ধকারে আলোর রেখা পড়ে। তখন নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়— “আমি কি পারছি অহংকার পরিহার করতে? পারছি কি লোভ, লালসা, হিংসা, পরনিন্দার জাল ছিঁড়ে বের হতে?” শ্মশান আমাদের শেখায়— জীবন ক্ষণিক, মৃত্যু নিশ্চিত। অথচ সেই চিরসত্যকে ভুলে আমরা প্রতিদিন যে দম্ভে, যে বিভ্রান্তিতে জীবন পার করি, তার শেষ পরিণতিই তো সেই নীরব শ্মশান। যেখানে কেউ কিছু বলতে আসে না, কেউ কিছু নিতে পারে না। আজ বেঁচে আছি— কাল কে জানে কোথায় থাকব! সময় থাকতে তাই নিজেকে শুধরে...

জীবনচক্র

ছবি
  জন্ম থেকে জীবন শুরু, চিতায় আগুনে হয় শেষ, শৈশব থেকে বৃদ্ধকাল, যৌবনে উত্তাল ধরে কত ছদ্মবেশ। হেঁটে চলে জীবনের পথে, কত শত মুখ দেখি, কত স্মৃতি হয় জড়ো, কিছু হাসি, কিছু কান্না, কিছু চাওয়া, কিছু পাওয়া, আবার কিছু না পাওয়ার শূন্যতা! আশার আলোয় আলোকিত এক নতুন সকাল, কত স্বপ্ন, কত ইচ্ছে, কত উন্মাদনা ধরা দেয় হৃদয়ে। শৈশবের দুরন্তপনা, কৈশোরের বাঁধনহারা উন্মত্ততা, প্রেমের প্রথম স্পর্শ, সবুজ পাতায় লেখা জীবনের নতুন অধ্যায়, আর বার্ধক্যের বিষণ্ণতা। তবুও এই খেলা থেমে থাকে না, জীবন আবার ফিরে আসে নতুন করে নতুন কোনো রূপে, এক জীবন থেকে আরেক জীবনে যেন এক অফুরন্ত নদী! একবার যদি শুরু হয় এই জীবন, তবে এর শেষ কোথায় কে জানে, কে বলতে পারে? জীবনের গল্প চলতেই থাকে, নতুন গল্প তৈরি হয়, আর সেই গল্পে লেখা হয়— নতুন এক ইতিহাস। নিতাই বাবু পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক – ২০১৭। লেখালেখির শুর...

মাটির ঘর

ছবি
মাটির ঘর — ঠাকুরদার লাল মাটির স্মৃতিতে মাটির ঘর (ঠাকুরদার লাল মাটির স্মৃতিতে) চাটগাঁর হাট থেকে লাল মাটি এনেছিলেন ঠাকুরদা, মাটির গন্ধ মাখা হাতে গড়েছিলেন স্বপ্ন-সদা। এক মুঠো ইচ্ছা, এক ঢেলা মাটি, এক টুকরো আকাশের নিচে উঠল আমাদের ঘরখানি। ছন-ঢাকা ছাদে বৃষ্টি পড়লে, সুর বেজে উঠত — যেন সানাই বাজে! বেলির গাছটা দাওয়ার পাশে, সন্ধ্যায় ফোটাত কুঁড়ি, মাটির ঘর হাসে। আঁধারে কুপি জ্বলে, কুপি জ্বলে মনে, ঘরের কোণে শুয়ে গল্প বলত দাদু জনে। তার কণ্ঠে শোনা যেত ইতিহাসের গান, কেমন করে এনেছিলেন লাল মাটির বয়ান। শীতের সকালে পাটিতে বসে, মা দিত খেজুর রস — উনুনে গরম ভাতে। ঘরের দেয়ালে ছিল ফাটল বহু, তবু ভালোবাসা ছিল প্রতিটা ইটে, প্রতিটা ঘিলে। আজ বহুতল, কংক্রিটের দেয়াল, তবু মনে পড়ে সেই মাটির প্রহরকাল। ঘরের গায়ে ধুলোর গন্ধ, আর ঠাকুরদার হাতে আনা লাল মাটির সন্ধান। নিতাই বাবু পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগ...

ভোরের অপেক্ষা

ছবি
  🌅 গল্প: ভোরের অপেক্ষা রাত পেরিয়ে নতুন একটি দিনের ভোর আসছে। গ্রামের শেষ প্রান্তের মাটির ঘরে বসে অশীতিপর বৃদ্ধ নিমাই দাদা তাকিয়ে আছেন পুরোনো কাঠের জানালা দিয়ে। বাইরের আকাশে এখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিন্তু তাঁর চোখে আলো। নয়, বাইরের নয়—ভেতরের আলো। তিনি জানেন, আজ হয়তো তাঁর জীবনের শেষ ভোর। বুকের ব্যথাটা এখন সহ্য হয় না। হাঁটতে পারেন না ঠিকমতো, কথা বলতে গেলেই কাশি চেপে ধরে। তবুও তিনি জানালা খুলে বসে আছেন, ভোর দেখবেন বলে। এই ভোর তাঁর কাছে শুধু সূর্য ওঠার সময় নয়, এটা যেন তাঁর জীবনের শেষ আলো। তিনি অপেক্ষা করছেন ছোট ছেলে সুমনের জন্য। শহর থেকে ফোন করেছিল গতকাল—‘বাবা, কাল আসব’। সেই অপেক্ষার ভোর আজ। নিমাই দাদার হাত কাঁপছে, কপালে ঘাম, কিন্তু চোখে অপেক্ষার আলো। হঠাৎ গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে একটা বাইকের শব্দ। জানালা দিয়ে ঝুঁকে তাকান তিনি। অন্ধকার ভেদ করে আলোয় ভেসে ওঠে সুমনের মুখ। নিমাই দাদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসলেন—যেন জীবনের সব দুঃখ লাঘব হয়ে গেল এই এক পলকে। ভোর এসেছিল, তবে সূর্য ওঠার আগেই নিমাই দাদা চোখ বুজলেন। আর সেই মুহূর্তে ঘরের বাইরে ছড়িয়ে পড়ল প্রথম রশ্মির আলো। ছেলে পাশে বসে...

স্বরবর্ণের অক্ষরগুলোর কথোপকথন

ছবি
  🅰️ স্বরবর্ণের অক্ষরগুলোর কথোপকথন অ বলে শোন রে তোরা আমি অসীম , আমিই সেরা! এ নিয়ে তোরা কে করবি আমার সাথে জেরা ? আ বলে আমি আল্লাহর ভক্ত , সেটা তুমি জানো? আরও হলাম আকাশকুসুম , এবার আমায় গুরু মানো! ই বলে আমি কি দেখাতে পারি আমার ইচ্ছাশক্তি ? আমি থাকি ইশারায় , তাই সবাই আমায় করে ভক্তি! ঈ বলে দেখ দেখি! আমি আছি স্বয়ং ঈশ্বরের কৃপায় ! আমার ভক্ত ঈমানদার , তবুও চিনছিস না আমায়? উ বলে আমি আছি সবার উপরে সকল উৎসবে , করো না তুচ্ছ ! একটু খেয়াল করে ভেবে দেখ সবে। ঊ বলে শুনলাম সবার কথা, শুনলাম সব গুণকীর্তন , ঊষালগ্নে আমায় দেখে শুরু করে হরিনাম সংকীর্তন । ঋ বলে শোন সবাই, আমি তোদের ঋণ দিয়ে চালাই, ঋষি , কৃষি যত আছে আমাকে ঋ নামে চিনে সবাই। এ বলে এই যা! এঁরা আমায় কেন দিয়েছে রে বাদ ? এবাদত ছাড়া কি গ্রহণ করতে পেরেছে স্বর্গের স্বাদ ? ঐ বলে চুপ থাক তোরা, ধেয়ে আসছে ঐরাবত ! ক্ষেপে গেলে বিপদ, যতই করিছ তোরা এবাদত ! ও বলে হায়রে কপাল! ওলকচু খাইছনি কোনকালে? ওলকচুতে গলা ধরে , মনে থাকে ইহকাল পরকালে ! ঔ বলে ঘাবড়াবে না! আমি ...

চিঠির দিনগুলি ও সেই ডাকপিয়ন

ছবি
  চিঠির দিনগুলি ও সেই ডাকপিয়ন চিঠির দিনগুলি ও সেই ডাকপিয়ন ✍️ নিতাই বাবু পুরনো সেই দিনের মতোন, একটা বাইসাইকেল, একটা খাকি জামা, ডান কাঁধে চিঠির বস্তা… আর দু’চোখে বহু খবরের ছায়া। সে আসতো রোদে-বৃষ্টিতে, ধানের মাঠ পেরিয়ে, মেঠো পথ ধরে। মা বলতো— “ডাকপিয়ন আসছে, দেখি চিঠি আছে কিনা!” আমরা দৌড়ে যেতাম উঠোনের ধারে। প্রেমিক লিখতো প্রেমিকার নাম, সন্তান পাঠাতো মায়ের খোঁজে কল্যাণবার্তা। ডাকপিয়নের ব্যাগে থাকতো কেউ কাঁদবে, আবার কেউ হাসবে— এমন শত শত কথা। ওর পায়ে ছিল না থেমে থাকার অভ্যাস, মেঘলা দুপুরেও সে থামেনি কখনো। কোনো খবর সুখের, কোনোটা মৃত্যুর, চোখের ভাষা বলতো সব বুঝতো সে– পাথরের মতো গম্ভীর, নরমও। আজ আর চিঠি আসে না, এসএমএস, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপের ভিড়ে হারিয়ে গেছে সে দিন। তবু মন চায়, সেই ডাকপিয়নের ঘন্টাধ্বনি শোনি একবার, যেখানে শব্দ নয়, হৃদয়ের ছোঁয়াই ছিল সেবার্তী চিন। নিতাই বাবু ...