পোস্টগুলি

আত্মজিজ্ঞাসা লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ব্যর্থ জীবনের গল্প

ছবি
  গল্প: ব্যর্থ জীবন বিকেলটা ছিল অদ্ভুত রকমের নীরব। সূর্যটা ছিল যেন একটু তাড়াহুড়োয়, নরম আলোটা ঘরের মেঝেতে হেলে পড়ছিল ধীরে ধীরে। সোহেল উদাস চোখে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। বাড়ির পাশের পুরনো আমগাছটার পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলো এসে পড়ছে তার মুখে, আর তাতেই যেন বেদনার রংটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। ৬৩ বছর বয়স— এই জীবনে কী পেল সে? একটা চাকরি ছিল, তাও মাঝখানেই ছেড়ে দিতে হয়েছিল পারিবারিক চাপে। ব্যবসা শুরু করেছিল—হঠাৎ এক বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করল। স্ত্রীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, আজ সেই স্ত্রী-ই যেন প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়— সে ব্যর্থ। সোহেল ধীরে ধীরে উঠলো, চুপচাপ আয়নার সামনে দাঁড়ালো। চুলে পাক ধরেছে অনেক আগেই, চোখে কালি, মুখে গাঢ় ক্লান্তি। নিজেকে দেখে তার মনে হলো, “এই আমি কি সেই সোহেল, যে একদিন স্বপ্ন দেখত—জীবনের রং পাল্টে দেবে?” সে জানালার পাশে বসে গেল। পিঠে একটা পুরনো চাদর জড়িয়ে, এক কাপ কড়া লাল চা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো— “কেন এসেছিলাম এই পৃথিবীতে?” “শুধু ব্যর্থতা দেখার জন্য?” স্মৃতিগুলো একে একে ভিড় করতে লাগল ...

পরিচয়হীন এক সোহেলের দিনলিপি

ছবি
পরিচয়হীন এক সোহেলের দিনলিপি — এক আত্মসমীক্ষার গল্প আজ ২৯শে জুন, বিকেল ৫টা। ঘড়ির কাঁটা নড়ছে, কিন্তু সময় আমার মধ্যে যেন থেমে আছে। জানালার ওপারে শিশিরভেজা ছাদ, একফোঁটা আলোও নেই আমার ঘরে। জানালা দিয়ে ঢুকছে কেবল শীতল হাওয়া আর পুরনো স্মৃতির গন্ধ। আমি সোহেল। তবে নামটা কেউ ডাকে না। প্রয়োজন ফুরালেই সবাই ভুলে যায়। তাই আজকাল নিজেকেও মনে হয় নামহীন এক মানুষ। একটা সময় ছিল, যখন ভাবতাম—জীবনে কিছু একটা হবো। কেউ একজন বলবে, “এই যে সোহেল ভাই, আপনার জন্যই তো এত কিছু সম্ভব হয়েছে।” কিন্তু না। কেউ বলে না। হয়তো বলার কথাও না। আমি নিজেও তো নিজেকে কিছু বানাতে পারিনি। একটা ছোট চাকরি করতাম—তিন রুমের একটা অফিস, ছোট ডেস্ক, ক্যাশবই আর এক রাগী বস। টিকটিকির মতো সারা দিন দেয়ালে ঝুলে থাকতাম, বিকেল হতেই বাসার দিকে হাঁটতাম হেঁটে হেঁটে। তাও সেই চাকরিটা হারালাম। কারণ? সৎ ছিলাম। এরপর দিন গেছে। বাড়িভাড়া, বাজার, ঋণ, স্ত্রীর অনুযোগ আর ছেলের পড়াশোনার খরচ—সবকিছুর নিচে পিষ্ট হতে হতে আমি বুঝলাম—আমি আর মানুষ নই, আমি কেবল একটা খরচের খাতা। বাড়ির কেউ...

খুঁজেছিলাম

ছবি
খুঁজেছিলাম সুখ খুঁজেছিলাম ভোরের শিশিরে, পাখির কূজনে, ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে— কিন্তু পাইনি শান্তি এক বিন্দুও হৃদয়পটে। পেয়েছি কেবল দুখীর দীর্ঘশ্বাস, পেয়েছি ক্লান্ত আত্মার কান্না নিঃসাড় রাতে। শান্তির মা’কে খুঁজেছিলাম উপবাসে, প্রার্থনায়, বসে ছিলাম ধ্যানস্থ নিস্তব্ধ বিকেলে— কিন্তু নেমে এলো কেবল অশান্তির ঝড়, আমার হৃদয়ের নিভৃত বাগানে। ভালোবাসা খুঁজেছি দুয়ারে-দুয়ারে, কিন্তু ফিরেছি কেবল শূন্যতার হাহাকারে। প্রেমের পিপাসা নিয়ে ঘুরেছি দ্বারে-দ্বারে, দেখেছি সেখানে অভিনয়ের বাজারে তামাশার ঝাড়ে। টাকা-পয়সা খুঁজেছি রাস্তায় রাস্তায়, পেয়েছি কেবল মরিচিকার ধুলো ছড়ায়। ধনসম্পদ খুঁজেছি মহল্লায় মহল্লায়, শেষে হাতে উঠেছে অদৃশ্য ফাঁসির দড়ি—নিভৃতে বালায়! মানুষ খুঁজেছি মানুষের মেলায়, তবু মনুষ্যত্ব পাইনি কোথাও, ছিল শুধু ছায়া! স্রষ্টাকে খুঁজেছি পাথরে, ধূপে, রীতিতে, তিনি ধরা দেননি—শুধু ছিলেন আমার হৃদয়ের গভীর সীমানায়! ✍️ লেখক পরিচিতি: নিতাই বাবু — একজন সাহিত্যনিবেদিত প্রাণ, সমাজসচেতন ও দার্শনিক কবি। তাঁর কবিতায় ফুটে ওঠে মানুষের বেদনা...

আমার বলতে কিছুই নেই

ছবি
আমার বলতে কিছু নেই যতই বলি, “এটা আমার, ওটা আমার”— স্রষ্টা বলেন, “নির্জনে শোনো আমার বারংবার: তোমার কিছুই নয় সত্যিকার! তোমার এই শরীর, তোমার এই প্রাণ, আমারই সৃষ্টি, আমারই দান। শুধু তোমার কর্মের ফলই চিরকাল তোমার।” বাড়ি, গাড়ি, ধন-দৌলত, সবই রবে ধুলোয়, নিঃস্ব আর কোলাহলহীন মৌনতায়। তোমার ‘আমার’ বলার অধিকারে আমি তো দিইনি কোনো স্বীকৃতি কোনো দিন। তোমার ‘তুমি’ও একসময় বিলীন— শুধু কর্ম, শুধু ন্যায়ের দিন-রজনী, সেইটুকুই যাবে তোমার সাথে, বাকিটুকু পড়ে থাকবে নিঃস্পন্দ পৃথিবীতে। তাই বলি, আমার বলতে কিছুই নেই— সবই মহান স্রষ্টার, এই জীবন, এই দেহ, এই শেষ অবধি পথটাও, তাঁরই করুণায় দেয়া উপহার। ✍️ লেখক পরিচিতি: নিতাই বাবু — পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্লগার, সাহিত্যপ্রেমী ও সমাজচিন্তক। লেখালেখির মাধ্যমে সমাজ, দর্শন ও মানবিক মূল্যবোধের কথা তুলে ধরেন। 📘 ব্লগ: নিতাই বাবুর ব্লগ 📤 শেয়ার করুন: 🔵 Facebook 🔷 Twitter 🟢 WhatsApp পাঠকের প্রতিক্রিয়া লেখককে অনুপ্রাণিত করে। আপনার অনুভূতি নিচে মন্তব্যে জানাতে ভ...

নিজেদের শান্তির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখা

ছবি
আমার ঠাকুরদার সংসারে সন্তান ছিল মাত্র তিনজন—তিন ছেলে। তাদের মধ্যে যিনি সবার বড়, তিনিই আমার বাবা। আর বাকী দুজন ছিলেন আমার বাবার ছোট ভাই, অর্থাৎ আমার মেজো কাকা ও ছোট কাকা। এখন হয়তো তাঁদের কেউ-ই আর বেঁচে নেই। আমার বাবার সংসারে আমরা ছিলাম ছয় ভাই-বোন—দুই ভাই ও চার বোন। ছোটবেলায় আমাদের মধ্যে হরহামেশাই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। কখনো কখনো সেটা রীতিমতো হাতাহাতিতে গড়াত। বাবা আমাদের থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। জোর করে আলাদা করতেন, বোঝাতেন, কিন্তু তবুও যখন আমাদের থামানো যেত না, তখন তিনি চুপচাপ বাড়ির উঠোনে বসে পড়তেন। আমি আজও ভুলতে পারিনি সেই দৃশ্য— বাবা কপালে হাত রেখে চোখের জল ফেলে বুক ভাসাতেন। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলতেন: > “ওরে তোরা ঝগড়া করিস না! আমার ভালো লাগে না! তোদের এই অশান্তি আমি আর সইতে পারছি না! হে দয়াল, আমাকে মৃত্যু দাও!” সেই সময় আমরা, শিশুমনে, বাবার সেই কান্নার গভীরতা বুঝতে পারিনি। কিন্তু আজ, যখন বাবা নেই, বড়দাদা নেই, বড়দিদিও নেই—তখন নির্জনে বসে ভাবি, সেই সময় বাবা কেন কেঁদেছিলেন? বুঝি, তিনি কাঁদতেন আমাদের মধ্যে শান্তি না দেখে, পরিবারের ভেতরে ভাঙন দেখে, ভালোবাসার অভাব দেখে। আজ এই...