পোস্টগুলি

জুলাই ১, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মা নাই যার, সংসার অরণ্য তার

ছবি
মা নাই যার সংসার অরণ্য তার — নোয়াখালীর মাহাতাবপুরের মায়ের স্মরণে মা ছিল আমার, এক মাটির প্রতিমা, নোয়াখালীর মাহাতাবপুর, বজরার কাছে ছিল তার ভূমিকা। চৌমুহনী থানার প্রান্তে, শান্ত এক হিন্দু পরিবারে, ছয় সন্তানের জননী হয়ে, আলো জ্বেলেছিলেন ঘরে ঘরে। তার কপালের সিঁদুর যেন ছিল সূর্যোদয়ের প্রতিচ্ছবি, তার আঁচলে ছিল গন্ধ, ধানভাঙা বিকেলের ছবি। তিনি ছিলেন ঘরের শ্রুতি, প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি, জীবনের কষ্টকে ঢেকে রাখতেন মায়াবী ভালবাসায় ভাসি। ভোরে উঠেই হাঁড়িতে চড়াতেন ভাত, শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে দিতেন গায়ে হাত। ঈশান কোণে প্রদীপ জ্বলত, তারই প্রার্থনায়, আমার ছোট ছোট দুঃখগুলো গলে যেত মায়ের ছায়ায়। আজ তিনি নেই... ঘরের উঠোনে আর তার পায়ের চিহ্ন পড়ে না, ভাতের হাঁড়িতে তার হাতের গন্ধ আর জাগে না। আলো জ্বালানো সেই চোখজোড়া এখন নিভে গেছে, শুধু স্মৃতির ঝর্নাধারায় মন আমার ভেসে চলে, ক্লান্ত, অনিশ্চিত পথ বেয়ে। দরজায় আজো কাঁপে হাওয়া, কিন্তু সে তো মায়ের নয়, দেয়ালে আজো ঝোলে ছবিখানি, নিঃশব্দে কেবল কাঁদে অশ্রু-ঢেউয়ে। তার ডাকা নামে কেউ আর ডাকেন...

বিষ টাকার পথে: বীরপাড়া থেকে ভুটান ফুন্টলসিং

ছবি
বিশ টাকার পথে: বীরপাড়া থেকে ভুটান ফুন্টসলিং ১৯৯৩ সাল। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় একদিন আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে পা বাড়াই ভারতের পথে। আমাদের যাত্রার সূচনা বেনাপোল বর্ডার পেরিয়ে বনগাঁ শহরে। দিনটি ছিল বিশেষ—বাংলা বছরের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ, ১৪০০ বঙ্গাব্দ । আমরা ছিলাম চারজন—আমি, আমার বন্ধু, আর তার দুই বোন। বনগাঁ থেকে রাত দশটার ট্রেনে চড়ে দমদমে পৌঁছাই প্রায় রাত বারোটায়। সেখান থেকে সরাসরি বন্ধুর আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে রাত কাটাই। পরদিন খুব ভোরে রওনা হলাম শিয়ালদা হয়ে বন্ধুর বাড়ি। কয়েক সপ্তাহ পর বুঝলাম, সেখানে আমার আশার আলো নেই। সিদ্ধান্ত নিলাম—যেতে হবে উত্তরবঙ্গের বীরপাড়ায়, বড় দিদির বাড়িতে। বীরপাড়া, জলপাইগুড়ি জেলার ছোট্ট একটি শহর। একসময় এই এলাকা ছিল চা-বাগানে ঘেরা। ধীরে ধীরে বাজার, মহল্লা, আর ঘন বসতির গড়ে ওঠা—সবই চা-বাগানের জমিতে। আমার বড় দিদির বাড়ি ছিল রবীন্দ্র নগর কলোনিতে । দিদি আমাকে চিনতে পারেননি প্রথমে। কারণ তার বিয়ের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। ১৯৬৪ সালে দিদি ও জামাইবাবু ভারতে চলে যান এবং আর কখনো দেশে ফেরেননি। প্রায় ৩০ বছর পর সেই দিদির বাড়ি গিয়ে পরিচয় ...

স্বাধীনতা-পরবর্তী: নোয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জ

ছবি
   স্বাধীনতা-পরবর্তী: নোয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জ — এক জীবন্ত দলিল ✍️ নিতাই বাবু) (জন্ম: ৮ জুন ১৯৬৩, মাহাতাবপুর, নোয়াখালী | বর্তমান নিবাস: নারায়ণগঞ্জ) 🌾 মাহাতাবপুর: আমার শৈশবের স্বর্গভূমি আমার জন্ম ১৯৬৩ সালের ৮ই জুন, নোয়াখালীর চৌমুহনী থানার অন্তর্গত বজরা রেলস্টেশনের পাশের গ্রাম মাহাতাবপুরে। আমাদের পরিবার ছিল গ্রামের মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত হিন্দু পরিবার। আমার শৈশব যেন ছিল এক নির্মল সময়ের রঙিন ক্যানভাস — ট্রেনের হুইসেল, পাশের খালের জেলেদের মাছ ধরা, আম-কাঁঠালের বাগানে খেলাধুলা, আর সন্ধ্যায় হারিকেনের আলোয় গল্পে মেতে ওঠা। 🔥 একাত্তরের আগুনে আমাদের উঠোন ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আমার জ্যাঠা ছিলেন পাকিস্তান আমলে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করা একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বে আমাদের বাড়ি হয়ে ওঠে মুক্তিবাহিনীর এক গোপন ঘাঁটি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা এসে জড়ো হতেন, আমার জ্যাঠার সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করতেন। অস্ত্রও আনা হতো গোপনে। শিশুরা দূরে থাকত, তবু টের পাওয়া যেত সবকিছু। ⚔️ স্বাধীনতা, কিন্তু শান্তি ন...