পোস্টগুলি

মনসা পূজা — ইতিহাস, তাৎপর্য ও সারসংক্ষেপ

ছবি
  মনসা পূজা — ইতিহাস, তাৎপর্য ও সারসংক্ষেপ | নিতাই বাবু মনসা পূজা — ইতিহাস, তাৎপর্য ও সারসংক্ষেপ মনসা পূজা হলো হিন্দুধর্মে সাপের দেবী মনসার আরাধনা। বাংলার গ্রামীণ সমাজে বিশেষভাবে প্রচলিত এই পূজা মূলত সাপের দংশন থেকে মুক্তি, পরিবারে শান্তি এবং কল্যাণ কামনায় অনুষ্ঠিত হয়। মনসা দেবীকে “নাগদেবী” বা “সাপের দেবী” বলা হয়। তাঁর পূজা শ্রাবণ মাসে বিশেষভাবে পালিত হলেও অন্যান্য সময়েও পালিত হতে দেখা যায়। 📜 মনসা পূজার ইতিহাস মনসা দেবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত কাহিনি একাধিক গ্রন্থে পাওয়া যায়। পুরাণ মতে, তিনি ঋষি কশ্যপ ও কদ্রুর কন্যা, আবার শিবের মন থেকে উদ্ভূত শক্তির রূপ হিসেবেও পরিচিত। বাংলার মধ্যযুগে রচিত মনসামঙ্গল কাব্য মনসা পূজার ইতিহাসের প্রধান ভিত্তি। এখানে বর্ণিত হয়েছে চাঁদ সৌদাগরের কাহিনি । তিনি ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী কিন্তু মনসা দেবীর পূজা করতে অস্বীকার করেছিলেন। দেবী বারবার তাঁর জীবনে নানা বিপদ সৃষ্টি করেন—জাহাজ ডুবিয়ে দেন, সন্তানহানি ঘটান। অবশেষে চাঁদ সৌদাগরের পুত্র লক্ষ্মীন্দর সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করলে বাধ্য হয়ে তিনি দেবীকে পূজা করেন। তখন মনসা সন্তুষ্ট হয়ে আ...

কালী পূজার ইতিহাস — তাৎপর্য ও কালী দেবীর বারো রূপ

ছবি
  কালী পূজার ইতিহাস, তাৎপর্য ও বারো কালী দেবীর রূপ | নিতাই বাবু কালী পূজার ইতিহাস, তাৎপর্য ও কালী দেবীর বারো রূপ কালী পূজা হিন্দুধর্মের একটি প্রধান শক্তিপূজা , যা বিশেষত বাংলায় ও পূর্ব ভারতে ব্যাপকভাবে পালিত হয়। দীপাবলির রাত্রে অমাবস্যার অন্ধকারে কালী পূজা করা হয়, যা অশুভ শক্তি, অজ্ঞানের অন্ধকার ও ভয়কে বিনাশ করে শক্তি, সাহস ও মুক্তির আলো জ্বালায়। কালী দেবী হলেন মহামায়া দুর্গার এক ভয়ঙ্কর রূপ, যিনি অসুরবিনাশিনী ও মুক্তিদাত্রী হিসেবে পূজিত। 🌸 কালী পূজার ইতিহাস কালী পূজার উৎপত্তি মূলত তান্ত্রিক সাধনা র সঙ্গে যুক্ত। মধ্যযুগে বাংলার তান্ত্রিক সাধকেরা মধ্যরাত্রে মহাকালী পূজা করতেন সিদ্ধিলাভের উদ্দেশ্যে। কালক্রমে এই পূজা রাজা-মহারাজা ও সমাজের উচ্চবিত্তদের আশ্রয়ে সর্বজনীন আচার হয়ে ওঠে। বিশেষত কৃষ্ণচন্দ্র রাজা ও কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এই পূজাকে সর্বসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলেন। এরপর থেকে বাংলায় দীপাবলির সঙ্গে কালী পূজা একত্রে পালিত হতে শুরু করে। 🌼 কালী পূজার তাৎপর্য অসুরবিনাশিনী শক্তি: কালী দেবী অশুভ শক্তি, দুষ্ট প্রবৃত্তি ও অহংকার দূর করেন...

বিশ্বকর্মা পূজা — ইতিহাস, কাহিনি ও তাৎপর্য

ছবি
  বিশ্বকর্মা পূজা — ইতিহাস, তাৎপর্য ও দেবতার কাহিনি বিশ্বকর্মা পূজা — ইতিহাস, তাৎপর্য ও দেবতার কাহিনি 🌸 বিশ্বকর্মা পূজার ইতিহাস বিশ্বকর্মা দেব হিন্দু পুরাণে স্বর্গের প্রধান স্থপতি ও নির্মাতা দেবতা হিসেবে বর্ণিত। তাঁকে বলা হয় “দিব্য স্থপতি” । দেবরাজ ইন্দ্রের প্রাসাদ, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, হনুমানের গদা, পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ নগরী—সবই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি বলে পুরাণে উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই তাঁকে শিল্প, প্রযুক্তি ও কারুশিল্পের দেবতা হিসেবে পূজা করা হয়ে আসছে। 🌼 পূজার তাৎপর্য শিল্প ও প্রযুক্তির দেবতা হিসেবে তাঁকে পূজা করলে কারিগর, প্রকৌশলী ও শ্রমজীবীরা কল্যাণ প্রাপ্ত হন বলে বিশ্বাস। কর্মক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, কারখানার সরঞ্জামাদি এই দিনে বিশেষভাবে পূজা করা হয়। বাংলায় বিশেষ করে কারখানা, মুদ্রণযন্ত্র, বস্ত্রকল, জাহাজ ও আধুনিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এ পূজা পালিত হয়। এই পূজা মানুষের সৃজনশীলতা, উৎপাদনশীলতা ও কর্মশক্তি জাগ্রত করার প্রতীক। গ্রামীণ সমাজে এখনও তাঁকে গৃহস্থালির কাজ ও...

চার বেদ — ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ: বিষয়বস্তু ও গুরুত্ব

ছবি
  চার বেদ — ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ চার বেদ — ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ বেদ হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম গ্রন্থ, যা শ্রুতি নামে পরিচিত। এগুলো ঋষিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত বাণী হিসেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়েছে। বেদ মোট চারটি—ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। প্রতিটি বেদের আলাদা স্বরূপ, ব্যবহার ও তাৎপর্য রয়েছে। ১. ঋগ্বেদ ঋগ্বেদ হলো সবচেয়ে প্রাচীন বেদ । এতে প্রায় ১,০২৮টি সূক্ত (স্তোত্র) আছে, যা বিভিন্ন দেবতাকে উদ্দেশ করে রচিত। প্রধানত অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র প্রভৃতি দেবতার স্তবগান এতে স্থান পেয়েছে। এই সূক্তগুলো প্রাচীন আর্যদের আচার, ধর্মবিশ্বাস ও দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন। ২. সামবেদ সামবেদকে বলা হয় সঙ্গীতের বেদ । এতে ঋগ্বেদের অনেক মন্ত্র সুরের মাধ্যমে গাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যজ্ঞকালে পুরোহিতেরা সুরেলা কণ্ঠে এই মন্ত্রপাঠ করতেন। তাই সামবেদ ভারতীয় সঙ্গীত ও রাগ-রাগিণীর মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। ৩. যজুর্বেদ যজুর্বেদে মূলত যজ্ঞ ও আচারবিধির বিস্ত...

বেদ — হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম গ্রন্থ, রচয়িতা ও বিষয়বস্তু

ছবি
  হিন্দুধর্মের মূল গ্রন্থ বেদ — পরিচয়, বিষয়বস্তু ও গুরুত্ব হিন্দুধর্মের মূল গ্রন্থ বেদ — পরিচয়, বিষয়বস্তু ও গুরুত্ব বেদ হলো হিন্দুধর্মের সবচেয়ে প্রাচীন ও মূল ধর্মগ্রন্থ। ‘বেদ’ শব্দের অর্থ জ্ঞান বা বিদ্যা । এগুলোকে বলা হয় শ্রুতি (ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞান), কারণ প্রাচীন ঋষিরা ধ্যান ও তপস্যার মাধ্যমে এ জ্ঞান লাভ করে শিষ্যদের মুখে মুখে প্রচার করেছিলেন। বেদের রচয়িতা বেদের নির্দিষ্ট কোনো মানব রচয়িতা নেই। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী— বেদ অপরুষেয় , অর্থাৎ মানব-অতীত ও ঈশ্বরপ্রদত্ত। ঋষি-মুনিরা এই জ্ঞান ‘শ্রবণ’ করেছিলেন এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রচার করেছেন। পরবর্তীতে বেদব্যাস এগুলোকে লিখিত রূপ দেন এবং চার ভাগে বিভক্ত করেন। বেদ কি সর্বপ্রথম হিন্দুধর্মের গ্রন্থ? হ্যাঁ, বেদকে হিন্দুধর্মের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রথম গ্রন্থ ধরা হয়। এটি হিন্দু সভ্যতার আদি ধর্মগ্রন্থ। ঋগ্বেদের স্তোত্রগুলি খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১৫০০–১২০০ অব্দের মধ্যে রচিত। তাই বেদই হিন্দুধর্মের প্রথম ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ । বেদ কয়টি? বেদ মোট চারটি — ঋগ...

হিন্দুধর্মের আঠারোটি মহাপুরাণ — নাম, বর্ণনা ও গুরুত্ব

ছবি
  হিন্দু ধর্মের আঠারোটি মহাপুরাণ: ব্রহ্ম, পদ্ম, বিষ্ণু, শিব, ভাগবত, নারদ, মার্কণ্ডেয়, অগ্নি, ভবিষ্য, ব্রহ্ম বৈবর্ত, লিঙ্গ, বরাহ, স্কন্দ, বামন, কূর্ম, মৎস্য, গরুড়, ব্রহ্মাণ্ড — ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা।" 🕉️ আঠারোটি মহাপুরাণ — ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা হিন্দু ধর্মে আঠারোটি মহাপুরাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এগুলোতে সৃষ্টি, পালন, লয়, দেব-দেবীর কাহিনি, আচার-ব্যবহার, ধর্মনীতি, ভক্তি ও মুক্তির শিক্ষা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। 📖 আঠারোটি মহাপুরাণের তালিকা ও ব্যাখ্যা ব্রহ্ম পুরাণ — সৃষ্টির উৎপত্তি, ব্রহ্মার মাহাত্ম্য ও ধর্মাচরণের মূলনীতি। পদ্ম পুরাণ — পদ্মফুল প্রতীকের আলোকে সৃষ্টিতত্ত্ব, তীর্থমাহাত্ম্য ও ভক্তি। বিষ্ণু পুরাণ — বিষ্ণুর দশাবতার কাহিনি, ধর্মরক্ষা ও জীবনের সঠিক পথ। শিব পুরাণ — শিবের লীলাকাহিনি, পার্বতী–শিব বিবাহ, গণেশ ও কার্তিকেয়ের জন্মকাহিনি। ভাগবত পুরাণ — কৃষ্ণলীলার বিশদ বর্ণনা, ভক্তি-যোগ ও আধ্যাত্মিক প্রেম। নারদ পুরাণ — ঋষি নারদের সংলাপ, ভক্তি, যোগ ও ধর্মনীতি। মার্কণ্ডেয় পুরাণ — দেবী মহাত্ম্যম বা চণ্ড...

হিন্দুধর্মের মহাপুরাণসমূহ — নারদ থেকে ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ

ছবি
  হিন্দুধর্মের মহাপুরাণসমূহ — নারদ থেকে ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ হিন্দুধর্মের মহাপুরাণসমূহ — নারদ থেকে ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ হিন্দুধর্মে আঠারোটি মহাপুরাণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোতে সৃষ্টিতত্ত্ব, দেব-দেবীর কাহিনি, ভক্তি, যোগ, ধর্মনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, জ্যোতিষ, চিকিৎসা, ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি বিষয়বস্তু স্থান পেয়েছে। এখানে আমরা নারদ পুরাণ থেকে ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ পর্যন্ত ১৩টি পুরাণের সারমর্ম সংক্ষেপে আলোচনা করব। নারদ পুরাণ নারদ পুরাণ মূলত ঋষি নারদের সংলাপভিত্তিক। এতে ভক্তি, যোগ, ধর্মনীতি এবং গীত, সঙ্গীত ও ভজনের গুরুত্ব বিশেষভাবে বর্ণিত। ভক্তিমার্গের সাধকদের কাছে এটি অত্যন্ত প্রভাবশালী পুরাণ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ মার্কণ্ডেয় পুরাণ -এ দেবী মহাত্ম্যম বা চণ্ডীপাঠের মূল অংশ রয়েছে। দুর্গার অসুরবধ কাহিনি এই পুরাণের কেন্দ্রীয় বিষয়। এটি শক্তি উপাসনার প্রধান গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। অগ্নি পুরাণ অগ্নি পুরাণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, চিকিৎসা-শাস্ত্র, জ্যোতিষ, স্থাপত্য ও শাস্ত্রকলার বিস্তৃত বিবরণ প্রদান করে। দৈনন্দিন জীবনের নানা আচারবিধি এতে সংকলিত। ভবিষ্য পুরাণ ভ...