পোস্টগুলি

জীবনচক্র

ছবি
  জন্ম থেকে জীবন শুরু, চিতায় আগুনে হয় শেষ, শৈশব থেকে বৃদ্ধকাল, যৌবনে উত্তাল ধরে কত ছদ্মবেশ। হেঁটে চলে জীবনের পথে, কত শত মুখ দেখি, কত স্মৃতি হয় জড়ো, কিছু হাসি, কিছু কান্না, কিছু চাওয়া, কিছু পাওয়া, আবার কিছু না পাওয়ার শূন্যতা! আশার আলোয় আলোকিত এক নতুন সকাল, কত স্বপ্ন, কত ইচ্ছে, কত উন্মাদনা ধরা দেয় হৃদয়ে। শৈশবের দুরন্তপনা, কৈশোরের বাঁধনহারা উন্মত্ততা, প্রেমের প্রথম স্পর্শ, সবুজ পাতায় লেখা জীবনের নতুন অধ্যায়, আর বার্ধক্যের বিষণ্ণতা। তবুও এই খেলা থেমে থাকে না, জীবন আবার ফিরে আসে নতুন করে নতুন কোনো রূপে, এক জীবন থেকে আরেক জীবনে যেন এক অফুরন্ত নদী! একবার যদি শুরু হয় এই জীবন, তবে এর শেষ কোথায় কে জানে, কে বলতে পারে? জীবনের গল্প চলতেই থাকে, নতুন গল্প তৈরি হয়, আর সেই গল্পে লেখা হয়— নতুন এক ইতিহাস। নিতাই বাবু পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক – ২০১৭। লেখালেখির শুর...

মাটির ঘর

ছবি
মাটির ঘর — ঠাকুরদার লাল মাটির স্মৃতিতে মাটির ঘর (ঠাকুরদার লাল মাটির স্মৃতিতে) চাটগাঁর হাট থেকে লাল মাটি এনেছিলেন ঠাকুরদা, মাটির গন্ধ মাখা হাতে গড়েছিলেন স্বপ্ন-সদা। এক মুঠো ইচ্ছা, এক ঢেলা মাটি, এক টুকরো আকাশের নিচে উঠল আমাদের ঘরখানি। ছন-ঢাকা ছাদে বৃষ্টি পড়লে, সুর বেজে উঠত — যেন সানাই বাজে! বেলির গাছটা দাওয়ার পাশে, সন্ধ্যায় ফোটাত কুঁড়ি, মাটির ঘর হাসে। আঁধারে কুপি জ্বলে, কুপি জ্বলে মনে, ঘরের কোণে শুয়ে গল্প বলত দাদু জনে। তার কণ্ঠে শোনা যেত ইতিহাসের গান, কেমন করে এনেছিলেন লাল মাটির বয়ান। শীতের সকালে পাটিতে বসে, মা দিত খেজুর রস — উনুনে গরম ভাতে। ঘরের দেয়ালে ছিল ফাটল বহু, তবু ভালোবাসা ছিল প্রতিটা ইটে, প্রতিটা ঘিলে। আজ বহুতল, কংক্রিটের দেয়াল, তবু মনে পড়ে সেই মাটির প্রহরকাল। ঘরের গায়ে ধুলোর গন্ধ, আর ঠাকুরদার হাতে আনা লাল মাটির সন্ধান। নিতাই বাবু পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগ...

ভোরের অপেক্ষা

ছবি
  🌅 গল্প: ভোরের অপেক্ষা রাত পেরিয়ে নতুন একটি দিনের ভোর আসছে। গ্রামের শেষ প্রান্তের মাটির ঘরে বসে অশীতিপর বৃদ্ধ নিমাই দাদা তাকিয়ে আছেন পুরোনো কাঠের জানালা দিয়ে। বাইরের আকাশে এখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিন্তু তাঁর চোখে আলো। নয়, বাইরের নয়—ভেতরের আলো। তিনি জানেন, আজ হয়তো তাঁর জীবনের শেষ ভোর। বুকের ব্যথাটা এখন সহ্য হয় না। হাঁটতে পারেন না ঠিকমতো, কথা বলতে গেলেই কাশি চেপে ধরে। তবুও তিনি জানালা খুলে বসে আছেন, ভোর দেখবেন বলে। এই ভোর তাঁর কাছে শুধু সূর্য ওঠার সময় নয়, এটা যেন তাঁর জীবনের শেষ আলো। তিনি অপেক্ষা করছেন ছোট ছেলে সুমনের জন্য। শহর থেকে ফোন করেছিল গতকাল—‘বাবা, কাল আসব’। সেই অপেক্ষার ভোর আজ। নিমাই দাদার হাত কাঁপছে, কপালে ঘাম, কিন্তু চোখে অপেক্ষার আলো। হঠাৎ গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে একটা বাইকের শব্দ। জানালা দিয়ে ঝুঁকে তাকান তিনি। অন্ধকার ভেদ করে আলোয় ভেসে ওঠে সুমনের মুখ। নিমাই দাদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসলেন—যেন জীবনের সব দুঃখ লাঘব হয়ে গেল এই এক পলকে। ভোর এসেছিল, তবে সূর্য ওঠার আগেই নিমাই দাদা চোখ বুজলেন। আর সেই মুহূর্তে ঘরের বাইরে ছড়িয়ে পড়ল প্রথম রশ্মির আলো। ছেলে পাশে বসে...

স্বরবর্ণের অক্ষরগুলোর কথোপকথন

ছবি
  🅰️ স্বরবর্ণের অক্ষরগুলোর কথোপকথন অ বলে শোন রে তোরা আমি অসীম , আমিই সেরা! এ নিয়ে তোরা কে করবি আমার সাথে জেরা ? আ বলে আমি আল্লাহর ভক্ত , সেটা তুমি জানো? আরও হলাম আকাশকুসুম , এবার আমায় গুরু মানো! ই বলে আমি কি দেখাতে পারি আমার ইচ্ছাশক্তি ? আমি থাকি ইশারায় , তাই সবাই আমায় করে ভক্তি! ঈ বলে দেখ দেখি! আমি আছি স্বয়ং ঈশ্বরের কৃপায় ! আমার ভক্ত ঈমানদার , তবুও চিনছিস না আমায়? উ বলে আমি আছি সবার উপরে সকল উৎসবে , করো না তুচ্ছ ! একটু খেয়াল করে ভেবে দেখ সবে। ঊ বলে শুনলাম সবার কথা, শুনলাম সব গুণকীর্তন , ঊষালগ্নে আমায় দেখে শুরু করে হরিনাম সংকীর্তন । ঋ বলে শোন সবাই, আমি তোদের ঋণ দিয়ে চালাই, ঋষি , কৃষি যত আছে আমাকে ঋ নামে চিনে সবাই। এ বলে এই যা! এঁরা আমায় কেন দিয়েছে রে বাদ ? এবাদত ছাড়া কি গ্রহণ করতে পেরেছে স্বর্গের স্বাদ ? ঐ বলে চুপ থাক তোরা, ধেয়ে আসছে ঐরাবত ! ক্ষেপে গেলে বিপদ, যতই করিছ তোরা এবাদত ! ও বলে হায়রে কপাল! ওলকচু খাইছনি কোনকালে? ওলকচুতে গলা ধরে , মনে থাকে ইহকাল পরকালে ! ঔ বলে ঘাবড়াবে না! আমি ...

চিঠির দিনগুলি ও সেই ডাকপিয়ন

ছবি
  চিঠির দিনগুলি ও সেই ডাকপিয়ন চিঠির দিনগুলি ও সেই ডাকপিয়ন ✍️ নিতাই বাবু পুরনো সেই দিনের মতোন, একটা বাইসাইকেল, একটা খাকি জামা, ডান কাঁধে চিঠির বস্তা… আর দু’চোখে বহু খবরের ছায়া। সে আসতো রোদে-বৃষ্টিতে, ধানের মাঠ পেরিয়ে, মেঠো পথ ধরে। মা বলতো— “ডাকপিয়ন আসছে, দেখি চিঠি আছে কিনা!” আমরা দৌড়ে যেতাম উঠোনের ধারে। প্রেমিক লিখতো প্রেমিকার নাম, সন্তান পাঠাতো মায়ের খোঁজে কল্যাণবার্তা। ডাকপিয়নের ব্যাগে থাকতো কেউ কাঁদবে, আবার কেউ হাসবে— এমন শত শত কথা। ওর পায়ে ছিল না থেমে থাকার অভ্যাস, মেঘলা দুপুরেও সে থামেনি কখনো। কোনো খবর সুখের, কোনোটা মৃত্যুর, চোখের ভাষা বলতো সব বুঝতো সে– পাথরের মতো গম্ভীর, নরমও। আজ আর চিঠি আসে না, এসএমএস, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপের ভিড়ে হারিয়ে গেছে সে দিন। তবু মন চায়, সেই ডাকপিয়নের ঘন্টাধ্বনি শোনি একবার, যেখানে শব্দ নয়, হৃদয়ের ছোঁয়াই ছিল সেবার্তী চিন। নিতাই বাবু ...

বিদায়ের আগে যা বলতে চাই

ছবি
  🌫️ বিদায়ের আগে যা বলতে চাই — একজন ক্ষণজন্মা পথিক আমি বুঝি… এই পৃথিবীতে আমার সময় ফুরিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। বাতাসে আজ কেমন এক বিদায়ের গন্ধ, বুকের ভিতর দীর্ঘশ্বাস, সময়ের ভারে চুপচাপ। প্রভু পাঠিয়েছিলেন আশায়, মানুষের মাঝে মানবতা ছড়াতে, ভালোবাসা দিতে, আঁধারে আলো জ্বালাতে। কিন্তু পারিনি সে পথে পুরোপুরি চলতে— থেমেছি মাঝে মাঝে, হে মহান স্রষ্টা, তোমার কাছে আজ তাই নিঃশব্দ ক্ষমা প্রার্থনা। আমি বলতে চাই— বন্ধুরা, সহযাত্রীরা, যারা পাশে ছিলেন নীরব ছায়ার মতো, তোমাদের ভালোবাসি, আজীবনের মতো। যদি কোনো দিন ভুলে কষ্ট দিয়ে থাকি, মাফ করে দিও—এই হৃদয়ের খোলা চিঠি পাঠ করে। আমি তো নিভে আসা প্রদীপ, তবু চাই, একটুখানি আলো তোমার কোনো অন্ধকার ঘরে পৌঁছাক। জীবন আমাকে শিখিয়েছে— প্রার্থনার চেয়ে ক্ষমা বড়, ঐশ্বর্যের চেয়ে করুণাই মহৎ, আর ভালোবাসার চেয়ে পবিত্র কিছু নেই। তাই… শেষ ক’টি দিনে আমি শুধু চাই বলতে, ভালোবাসুন মানুষকে— তার মতভেদ, বিশ্বাস, ব্যর্থতা নিয়েই। ক্ষমা করুন—ভুলগুলো হোক হৃদয়ের ঘামে ধুয়ে যাওয়া। ধরুন হাত—কারণ একা একা কেউই পারবে না বাঁচতে। আর যদি এই লেখাটুকু পড়েন— জা...

শেষ ক'টি দিনে যা বলতে চাই

ছবি
  শেষ ক'টি দিনে যা বলতে চাই একটা সময় আসে, যখন মানুষ থেমে দাঁড়ায় নিজের ছায়ার মুখোমুখি। আজ আমি তেমন এক মুহূর্তে পৌঁছেছি। জানি না আর কতটা সময় আছে হাতে, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে অনুভব করছি—আমি হয়তো এই সুন্দর পৃথিবীতে আর বেশিদিন নেই। মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো অনেক আশা নিয়ে আমাকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন—এই পৃথিবী, এই সমাজ, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করবো বলে। আমি চেষ্টা করেছি। কখনো কলম দিয়ে, কখনো কথা দিয়ে, কখনো নীরবতা দিয়ে সমাজকে বোঝাতে চেয়েছি আমার মনের কথা। তবুও আমি জানি, অনেক কিছুই করতে পারিনি। অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছি, পিছিয়ে গেছি, ক্লান্ত হয়েছি। হয়তো সাহস ছিল না, সুযোগ ছিল না, অথবা ছিল না পাশে থাকার মতো কেউ। আজ আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাই—মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, এই সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে। আমি চাই, আমার এই শেষ ক'টি দিন যেন হয় কিছু দেওয়ার, কিছু জানানোর, কিছু ফিরে পাওয়ার। আমি চাই, আমার লেখা—আমার অনুভব—আমার কথাগুলো থেকে কেউ যদি একটিবার থেমে ভাবে, তাহলেই আমি সার্থক। জানি, এই পৃথিবী চলে যাবে নিজের ছন্দে। আমি থাকি বা না থাকি, নদী বইবে, পাখিরা গাইবে, রোদ ঝরে পড়বে জানালায়। আমি শুধু ...