পোস্টগুলি

একটি মাঠ; হাজারো প্রাণের স্মৃতি

ছবি
একটি মাঠ, হাজারো প্রাণের স্মৃতি সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, বদলায় শহরের চেহারাও। কিন্তু কিছু কিছু স্মৃতি থেকে যায় আমাদের ভেতরে অমলিন, যা ফিরে ফিরে আসে জীবন যখন খানিকটা স্থির হয়—ঠিক যেমন ফিরে আসে গোদনাইলের সেই প্রিয় খেলার মাঠের কথা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই মাঠটি কেবল একটি খেলার মাঠ নয়—এ যেন হাজারো প্রাণের গল্পগাথা , অসংখ্য শৈশব-কৈশোরের উঠেপড়া আর স্বপ্ন বোনা একটা জীবন্ত ইতিহাস। একসময়কার চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্‌ -এর প্রাণকেন্দ্রে থাকা এই মাঠ আজও বহন করে তার গৌরবময় অতীত। ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী -র আন্তরিক উদ্যোগে এই মাঠটি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে আসে। তারপর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক উন্নয়ন—পশ্চিম পাশে বসার সিঁড়ি, মাঠ পাইলিং করে সমতলকরণ, চারপাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, শতাধিক বৃক্ষরোপণ এবং সন্ধ্যার পরও খেলার জন্য অর্ধশত লাইটপোস্ট স্থাপন—সব মিলিয়ে মাঠটি যেন এক নতুন প্রাণ ফিরে পায়। এই মাঠের ঘাসে গড়াগড়ি খেতে খেতে বড় হয়েছে চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্‌ এলাকার হাজারো ছেলে। কেউ আজ দ...

আমার শৈশবের বন্ধু— শীতলক্ষ্যা

ছবি
🌊 আমার শৈশবের বন্ধু – শীতলক্ষ্যা 💙 নদী মানেই শুধু পানি নয়... নদী মানে এক বুক স্মৃতি, একমুঠো স্বপ্ন, একটুকরো শৈশব। স্বাধীনতার পর, বন্দরে আসার শুরুতেই আমার নতুন জীবনের গল্পে শীতলক্ষ্যা ছিল আমার প্রতিদিনের সঙ্গী। সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার পথে তার কলকল শব্দ, দুপুরে ঘাটের ছেলেদের খেলাধুলা, আর বিকেলে নৌকার হালকা দুলুনিতে স্বপ্ন দেখা—এসব কিছুই বাঁধা ছিল এই নদীর সঙ্গে। কিন্তু আজ... আমার সেই প্রিয় বন্ধুটা আর আগের মতো নেই। কলকারখানার দূষণ, বেদখল আর লোভের আগ্রাসনে সে যেন দম বন্ধ হয়ে আসা এক নীরব আত্মা। এই নদীর বুকেই আমি ছুঁয়েছিলাম জীবনের প্রথম স্বাধীনতা। আজ সেই নদীর বুক চিড়ে বয়ে চলে বিষ ও বিসর্জনের ধারা। তবুও স্মৃতির ভেতর সে এখনো আছে। আমি আজও শুনতে পাই সেই ঢেউয়ের ডাক। — নিতাই বাবু

বৌলতলি করপাড়া গ্রামের স্মৃতিচিহ্ন

ছবি
  গোপালগঞ্জ সদরের একটি শান্ত ও সবুজ গ্রাম— বৌলতলি করপাড়া । এই গ্রামের পথ, মাঠ, পুকুর, আর মানুষের মুখে জড়িয়ে আছে হাজারো স্মৃতি ও অনুভব। এখানে কাটানো শৈশব কিংবা দেখা প্রথম ভালোবাসা, স্কুলমাঠে খেলাধুলা কিংবা বিকেলের শিষ বাজানো—সবকিছু একদিন ফিরে আসে হৃদয়ের পাতায়। এই কবিতাটি সেই ফেলে আসা দিনগুলোর এক স্মৃতিচারণ, যেখানে গ্রামবাংলার নিসর্গ, মানুষের আন্তরিকতা এবং একটি কিশোরীর স্বপ্ন একত্রে গাঁথা হয়েছে। পাঠকদের জন্য এটি শুধুই একটি কবিতা নয়, বরং হৃদয়ের এক টুকরো ফিরে দেখা গ্রামজীবন। বৌলতলি করপাড়া গ্রামের স্মৃতিচিহ্ন মাঠে পুকুর পাড়ে, সাঁঝের কুয়াশায়, করপাড়ার ঘাটে বাজে স্মৃতির বাঁশি, তাল-গাছ, শাল-গাছ, বাতাসের ভাঁজে— বৌলতলি গ্রামে হৃদয় আজও হাঁসি। চালার নিচে আলো, খড়ের ঘ্রাণ মাখা, কিশোরীর হাঁসিতে কেঁপে ওঠে মন, মেঠো পথ ডাকে, ফেরার অনুরাগে, অঞ্জলি বিশ্বাস সেই সোনালি লক্ষ্মীজন। স্কুলব্যাগ কাঁধে, চোখে স্বপ্ন ঝিকিমিকি, দশম শ্রেণির দিন লেখা ছেঁড়া পাতায়, যে গাছের ছায়ায় সে গল্প বলত, আজো দাঁড়িয়ে...

গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বন্দরের পথে: বাদাম বিক্রির শৈশব স্মৃতি

ছবি
🩵 গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বন্দরের পথে: বাদাম বিক্রির শৈশবের দিনলিপি ✍️ লেখক: পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক নিতাই বাবু 📍 স্থান: নোয়াখালীর মহাতাবপুর, গ্রাম - থেকে - লক্ষ্মণখোলা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ। ১৯৬৩ সালের জুনে আমার জন্ম, সেই অবহেলিত গ্রাম মহাতাবপুর -এ। গ্রামের পাশেই বাজরা রেলস্টেশন, আর দূরে কোথাও ছিল যুদ্ধের গন্ধ। বাবা তখন নারায়ণগঞ্জের এক ছোট চাকুরে, মাটি দিয়ে ঘেরা একটা দোচালা ঘর আর মা'র আঁচলে বাধা শান্তি ছিল আমাদের পৃথিবী। ১৯৬৮ সালে আমি ভর্তি হই মহাতাবপুর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে । পা জোড়া ছিল খালি, মাথায় ছিল ধুলো, আর কাঁধে ছালার ব্যাগে কয়েকটা বই। খাতার পাতা ভরে উঠতো কাঁচা হাতের অক্ষরে, কিন্তু মনের আকাশে আঁকা হতো স্বপ্নের রং। ১৯৭১ সালে দেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। দেশ স্বাধীন হবার পর গ্রামে ডাকাতে উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার আমরা আর গ্রামে থাকতে পারিনি। আমাদের পরিবার চলে আসে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় । আমি ভর্তি হই লক্ষ্মণখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । সেখানেও অভাব পিছু ছাড়েনি। ক্লাসের ফাঁকে বাদাম বিক্রি করতাম বাজারে, সেই টা...

হিন্দুধর্মে হাতেখড়ি ইতিহাস, নিয়ম ও তাৎপর্য

ছবি
✍️ হিন্দুধর্মে হাতেখড়ি: ইতিহাস, নিয়ম ও তাৎপর্য 🪔 ভূমিকা হিন্দু সমাজে শিক্ষা গ্রহণের সূচনাকে অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এই সূচনাকেই বলা হয় “হাতেখড়ি” বা “বিদ্যারম্ভ” । এটি শিশুর জীবনে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ নিয়ে এগিয়ে চলার এক শুভ সূচনা। 📜 ইতিহাস প্রাচীন ভারতে গুরুকুল প্রথায় শিক্ষার সূচনা ছিল একটি ধর্মীয় আচার। বৈদিক যুগে শিশুর বিদ্যাচর্চা শুরু হতো উপনয়নের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে গৃহস্থ পরিবারগুলোও এই বিদ্যারম্ভ আচার পালন করতে শুরু করে, যা আজ হাতেখড়ি নামে পরিচিত। 📋 নিয়ম বা পদ্ধতি হাতেখড়ি সাধারণত শিশুর বয়স ৪-৬ বছর হওয়ার পর শুভ দিনে পালন করা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় দিন হলো সরস্বতী পূজা (বসন্ত পঞ্চমী) । 📌 সাধারণ রীতি: 🔸 পূজা-অর্চনা: সরস্বতী দেবীর মূর্তির সামনে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। 🔸 শিশুকে বসানো: নতুন বা পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে বসানো হয়। 🔸 প্রথম লেখা: শিশুকে চালের উপর বা স্লেটে লিখানো হয় — “অ” / “ওঁ” / “ॐ नमः शिवाय” ইত্যাদি। 🔸 আশীর্বাদ: আত্মীয়রা আশীর্বাদ করেন ও মিষ্টি খাওয়ান...

মেয়ের বাড়ি করপাড়ায়

ছবি
সবুজ ছায়া ছুঁয়ে আসে, বৌলতলি বাজার পেরিয়ে— করপাড়ার পথ ধরে হাটছি, যেন গ্রামজীবনের গভীর এক বয়ে যাওয়া গান। এক পাশে কলাপাতা নড়ে, চুপিচুপি বলে যায় গল্প, অন্য পাশে ধানক্ষেতের হাসি মাঠের বুক ভরে দেয় স্বপ্ন। এই পথে কতদিন হেঁটেছে পা, মাঠের ছেলে, স্কুলের মেয়ে, কখনো বর্ষায় কাদামাখা, কখনো শরতে রোদে ভেজা। বোলাকর বাজারের ডাক, দূরে বাজে যেন শালিকের গান, এই পথ শুধু রাস্তা নয়— এ এক মায়ার টান। গোধূলি নামলে গাছেরা কাঁপে, হাওয়ার সাথে বাজে বাঁশির সুর, এই করপাড়ার শান্ত ছায়াপথ আমার হৃদয়ের উর্বর থির। ভূমিকা গ্রাম মানেই একটানা চলতে থাকা প্রাণের ছন্দ— সবুজ গাছ, পাখির ডানা, মাঠের বুকজুড়ে বাতাসের পরশ। আমার জন্মভূমি গোপালগঞ্জের করপাড়া গ্রাম— যেখানে বৌলতলি বাজার থেকে শুরু হয়ে একটি সরু পিচঢালা রাস্তা এগিয়ে চলে মাঠের পাশ দিয়ে, গাছের ছায়া পেরিয়ে, মানুষের চেনা মুখ, হারিয়ে যাওয়া গন্ধ আর ফেলে আসা দিনগুলোর মতো এক অনুভব বয়ে নিয়ে। এই পথ শুধু যাত্রার মাধ্যম নয়, এ পথ আমার শৈশবের সঙ্গী, আমার নীরব ভালোবাসা, আমার স্মৃতির রঙিন রেখা। এই করপাড়ার পথকে ঘিরেই রচিত হয়েছে একটি কবিতা— যার প্রতিটি শব্দে মিশে আছে মাটি, গন্ধ, ছায়...

করপাড়ার পথ

ছবি
সবুজ ছায়া ছুঁয়ে আসে, বৌলতলি বাজার পেরিয়ে— করপাড়ার পথ ধরে হাটছি, যেন গ্রামজীবনের গভীর এক বয়ে যাওয়া গান। এক পাশে কলাপাতা নড়ে, চুপিচুপি বলে যায় গল্প, অন্য পাশে ধানক্ষেতের হাসি মাঠের বুক ভরে দেয় স্বপ্ন। এই পথে কতদিন হেঁটেছে পা, মাঠের ছেলে, স্কুলের মেয়ে, কখনো বর্ষায় কাদামাখা, কখনো শরতে রোদে ভেজা। বোলাকর বাজারের ডাক, দূরে বাজে যেন শালিকের গান, এই পথ শুধু রাস্তা নয়— এ এক মায়ার টান। গোধূলি নামলে গাছেরা কাঁপে, হাওয়ার সাথে বাজে বাঁশির সুর, এই করপাড়ার শান্ত ছায়াপথ আমার হৃদয়ের উর্বর থির। ভূমিকা গ্রাম মানেই একটানা চলতে থাকা প্রাণের ছন্দ— সবুজ গাছ, পাখির ডানা, মাঠের বুকজুড়ে বাতাসের পরশ। আমার জন্মভূমি গোপালগঞ্জের করপাড়া গ্রাম— যেখানে বৌলতলি বাজার থেকে শুরু হয়ে একটি সরু পিচঢালা রাস্তা এগিয়ে চলে মাঠের পাশ দিয়ে, গাছের ছায়া পেরিয়ে, মানুষের চেনা মুখ, হারিয়ে যাওয়া গন্ধ আর ফেলে আসা দিনগুলোর মতো এক অনুভব বয়ে নিয়ে। এই পথ শুধু যাত্রার মাধ্যম নয়, এ পথ আমার শৈশবের সঙ্গী, আমার নীরব ভালোবাসা, আমার স্মৃতির রঙিন রেখা। এই করপাড়ার পথকে ঘিরেই রচিত হয়েছে একটি কবিতা— যার প্রতিটি শব্দে মিশে আছে মাটি, গন্ধ, ছায়...