মা নাই যার, সংসার অরণ্য তার


মা নাই যার সংসার অরণ্য তার

— নোয়াখালীর মাহাতাবপুরের মায়ের স্মরণে

মা ছিল আমার, এক মাটির প্রতিমা,
নোয়াখালীর মাহাতাবপুর, বজরার কাছে ছিল তার ভূমিকা।
চৌমুহনী থানার প্রান্তে, শান্ত এক হিন্দু পরিবারে,
ছয় সন্তানের জননী হয়ে, আলো জ্বেলেছিলেন ঘরে ঘরে।

তার কপালের সিঁদুর যেন ছিল সূর্যোদয়ের প্রতিচ্ছবি,
তার আঁচলে ছিল গন্ধ, ধানভাঙা বিকেলের ছবি।
তিনি ছিলেন ঘরের শ্রুতি, প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি,
জীবনের কষ্টকে ঢেকে রাখতেন মায়াবী ভালবাসায় ভাসি।

ভোরে উঠেই হাঁড়িতে চড়াতেন ভাত,
শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে দিতেন গায়ে হাত।
ঈশান কোণে প্রদীপ জ্বলত, তারই প্রার্থনায়,
আমার ছোট ছোট দুঃখগুলো গলে যেত মায়ের ছায়ায়।

আজ তিনি নেই...
ঘরের উঠোনে আর তার পায়ের চিহ্ন পড়ে না,
ভাতের হাঁড়িতে তার হাতের গন্ধ আর জাগে না।
আলো জ্বালানো সেই চোখজোড়া এখন নিভে গেছে,
শুধু স্মৃতির ঝর্নাধারায় মন আমার ভেসে চলে, ক্লান্ত, অনিশ্চিত পথ বেয়ে।

দরজায় আজো কাঁপে হাওয়া, কিন্তু সে তো মায়ের নয়,
দেয়ালে আজো ঝোলে ছবিখানি, নিঃশব্দে কেবল কাঁদে অশ্রু-ঢেউয়ে।
তার ডাকা নামে কেউ আর ডাকেনা,
আমি ডাকি, সাড়া পাই না— এই হলো শূন্যতার ব্যাখ্যা।

মা নাই যার,
সংসার তার হয়ে ওঠে জনমানবহীন বনভূমি,
শব্দহীন, কোলাহলহীন, হাহাকারে গুমরে ওঠা প্রতিটি মুহূর্তে—
মায়ের অভাব যেন এক চিরস্থায়ী নীরবতার সঙ্গী।


🌺 উৎসর্গ:
নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী থানার বজরা রেলস্টেশন সংলগ্ন মাহাতাবপুর গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের শ্রদ্ধেয় গৃহিণী,
ছয় সন্তানের জননী, আমাদের জীবনের প্রথম আশ্রয়—
যার নিঃশব্দ ত্যাগ ও ভালোবাসায় গড়া আমার শৈশব।


✍️ লেখক: নিতাই বাবু
ব্লগার, কবি ও শব্দস্মৃতির লেখক                পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক ব্লগ ডট বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

📤 শেয়ার করুন:
ফেসবুকে শেয়ার করুন | টুইটারে শেয়ার করুন | হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার শৈশবের বন্ধু— শীতলক্ষ্যা

একটি মাঠ; হাজারো প্রাণের স্মৃতি