বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস — ধর্মগ্রন্থ, ত্রিপিটক ও গুরুত্ব

 

বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থসমূহ

বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থসমূহ

বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও দর্শনভিত্তিক ধর্ম। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গৌতম বুদ্ধ-এর শিক্ষা থেকে এর সূচনা ঘটে। তিনি মানবজীবনের দুঃখ ও দুঃখমুক্তির পথ নিয়ে শিক্ষা প্রদান করেছিলেন, যা আজও কোটি মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের পথপ্রদর্শক।

🌸 বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস

গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে লুম্বিনী (বর্তমান নেপাল)। শাক্য রাজকুমার হিসেবে তিনি বিলাসবহুল জীবনে বড় হন। কিন্তু বার্ধক্য, রোগ, মৃত্যু ও দুঃখ দেখে সংসারত্যাগ করেন। বোধিবৃক্ষের নিচে দীর্ঘ ধ্যান ও সাধনার পর তিনি জ্ঞানপ্রাপ্ত হন এবং ‘বুদ্ধ’ উপাধি লাভ করেন।

তিনি মানুষকে শিক্ষা দেন —

  • চতুরার্য সত্য: দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখ নিরসন ও মুক্তির পথ।
  • অষ্টাঙ্গিক মার্গ: সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীবিকা, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি।

সম্রাট অশোক (খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতক) বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় আশ্রয় দেন এবং তাঁর প্রচেষ্টায় এটি ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, কোরিয়া, তিব্বতসহ এশিয়ার বহু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

📚 বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহ

বৌদ্ধ ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হলো ত্রিপিটক। এর অর্থ তিন ঝুলি বা তিন পিটক। এগুলো হলো—

১. বিনয় পিটক

ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের জন্য আচরণবিধি ও শৃঙ্খলাবিধি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি ও নিয়মকানুনের বিশদ বিবরণ এতে আছে।

২. সুত্ত পিটক

বুদ্ধের ধর্মদেশনা, নীতিকথা ও উপদেশের সংকলন। এতে সাধারণ মানুষ নৈতিক জীবনযাপন ও দুঃখমুক্তির উপায় জানতে পারে। বিখ্যাত ধম্মপদ এই অংশে অন্তর্ভুক্ত।

৩. অভিধর্ম পিটক

গভীর দার্শনিক আলোচনা, মন ও চেতনার বিশ্লেষণ। এটি পণ্ডিত ও গবেষক মহলে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন।

🌼 অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ

  • ধম্মপদ: বুদ্ধের উপদেশবাণীর সংকলন, যেখানে নৈতিক শিক্ষা ও জীবনদর্শন ফুটে উঠেছে।
  • জাতক কাহিনি: বুদ্ধের পূর্বজন্মের গল্প, যেখানে দয়া, ত্যাগ ও নৈতিকতা শেখানো হয়।
  • মহাযান সূত্র: মহাযান বৌদ্ধধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেমন সদ্ধর্মপুণ্ডরীক সূত্র (লোটাস সূত্র) ও অবতংসক সূত্র
  • তিব্বতি কঞ্জুর ও তাঞ্জুর: তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।

📌 সারসংক্ষেপ

বৌদ্ধ ধর্ম গৌতম বুদ্ধের মানবকল্যাণমুখী শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এর মূল শিক্ষা হলো দুঃখ থেকে মুক্তি, নৈতিক জীবন, করুণা ও প্রজ্ঞা। ধর্মগ্রন্থের মূল কাঠামো ত্রিপিটকের তিন ভাগে বিভক্ত—বিনয়, সুত্ত ও অভিধর্ম। পাশাপাশি ধম্মপদ, জাতক কাহিনি, মহাযান সূত্র ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ। আজও বৌদ্ধ ধর্ম কোটি মানুষের জীবনে শান্তি, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ প্রদর্শন করছে।

লেখক নিতাই বাবু

✍️ নিতাই বাবু

🏆 পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক – ২০১৭
🏆 ব্লগ ডট বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর – ২০১৬
📚 সমাজ, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, গল্প, কবিতা ও সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের লেখালেখি।

⚠️ গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

আমি চিকিৎসক নই, কোনো ধর্মগুরুও নই। আমি একজন সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য বা ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে ইমেইলে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

🔒 গোপনীয়তা নীতি

এই পোস্টটি শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। এখানে ব্যবহৃত কিছু তথ্য ChatGPT (by OpenAI) থেকে সংগৃহীত। কোনো ধর্ম, চিকিৎসা বা আইন বিষয়ক সিদ্ধান্তের আগে যোগ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

⚠️ সতর্কবার্তা: ব্যক্তিভেদে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তাই এখানে দেওয়া তথ্য যাচাই না করে সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবেন না।

প্রিয় পাঠক, আমার লেখা ভালো লাগলে 🙏 দয়া করে শেয়ার করুন এবং মন্তব্য করে উৎসাহ দিন 💖

👁️
0 জন পড়েছেন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার শৈশবের বন্ধু— শীতলক্ষ্যা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঈশ্বর ভাবনা

মা নাই যার, সংসার অরণ্য তার