পোস্টগুলি

রাজা ও প্রজার কথোপকথন

ছবি
রাজা প্রজা দৃশ্য: রাজপ্রাসাদ। রাজা তার সিংহাসনে বসলেন। সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রজা। রাজা: “প্রজারে! আ-রে বেটা, তোর এতো সাহস কে-রে? তুই কি জানিস, আমি কি করতে পারি তোকে? চুপ থাকিস! আমার পক্ষে থাকিস, নাহয় দেখবো তোকে।” প্রজা: “রাজা মহাশয়, আপনার মালিক, আমারও মালিক ঐ স্রষ্টা নির্দোষ। আমি জানি, আপনি মহান। কিন্তু আমরাও মানুষ, আমাদেরও প্রাণ, আমাদেরও আশা।” রাজা: “কি বললি? দিবো সাজা, কাটবো হাত তোদের! আমি রাজা, আমি মালিক, বুঝে নে ছোট জাত!” প্রজা: “মহান রাজা, শক্তি দিয়ে যদি শাসন চালাও, তাহলে অন্যায় হবে, জ্বলবে কারাগার! আমরা নই শুধুই ভয়ে, আমরা চাই ন্যায়, আমরা চাই শান্তি, প্রগতি আর আশা।” রাজা: “সত্য কি? সত্য আমার কথা! আমি চাই তোমরা শাসনের আওতায় থাকো, অথচ তোমরা বিদ্রোহী—কী করবে তা?” প্রজা: “বিদ্রোহ নয়, রাজা, তা স্বপ্নের ডাক, যে দিবে মুক্তি, যে দেখাবে সঠিক পথ। শাসন নয় প্রজা, আমরা চাই শ্রদ্ধা, তোমার গর্জন নয়, আমাদের হৃদয়ে শান্তি।” রাজা: “চুপ কর, নত মাথা, আমার কথা শুন! অবা...

মেহনতি মানুষের জয় হোক

ছবি
মেহনতি মানুষের জয় হোক ✊ রাজা তলোয়ারে ঠেকিয়ে বলে, "এই যে নিত্য গোপাল! তুই কেন এমন কপাল! দিনরাত খাটিস, মাটি কাটিস— বল তো, কবে পাবি আরেকটা ভালো হাল?" নিত্য গোপাল হেসে জবাব দেয়, "রাজামশাই, আপনারও তো দরকার জয়! আমি না খাটলে, ফসল উঠবে কই? রাজ্য জয়ের পেছনে, লুকিয়ে আছে গরিবের ক্ষয়।" রাজা চোখ লাল করে গর্জে ওঠে, "তোদের রক্তে নয় মোর কপাল! আমি ভাগ্যবান, রাজার মতোই মোর চাল— তোদের মতো সাত কপাল না, আমার একটাই রাজকপাল!" নিত্য গোপাল মাথা নিচু করে বলে, "রাজা মশাই, ভাগ্য কারো এক, কারো দুই নয়, আছে শুধু সময়ের খেলা—একালের পরে আসে সেকাল! টাকার ঢেউয়ে সুখ আসে না, বুকের শান্তিতেই তো প্রকৃত কপাল!" রাজা হাসে, রঙ্গ করে— "বোকা গোপাল! সুখ তো আমার রাজপ্রাসাদে! তোর জীবনে কেবল হাহাকার, আর আমার প্রাসাদে সুখের পাহাড়!" নিত্য গোপাল এবার চোখ তুলে চায়— "রাজা মশাই, সুখ যার ভেতরে, সে-ই রাজা হয়! স্রষ্টা একদিন সবাইকে সমান করে দেয়— সেই দিন রাজাও ফকির হয়! তখনই বোঝা যাবে কার সত...

নগর খাঁনপুরের পুকুরপাড়ে

ছবি
 নগর খাঁনপুরের পুকুরপাড়ে শীতলক্ষ্যার কোলঘেঁষে একটি পুরনো মহল্লা— নগর খাঁনপুর । পাড়ার দক্ষিণ পাশে একটি বড় পুকুর, যার ঘাটে কাকভোরে আসে বৃদ্ধেরা স্নান করতে, আর দুপুরে নেমে পড়ে ছেলেরা জলে। এই পুকুরঘাটেই একদিন বিনয়ের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। বিনয় পাল—এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারে জন্ম। বাবা ছিলেন নরসুন্দর, পুকুরপাড়ে কাঠের চৌকিতে বসে দাড়ি কামাতেন। বিনয় হাফশার্ট আর ছেঁড়া চটের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেত, স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে শিক্ষক হবার। একদিন পুকুরঘাটে বসে থাকতেই হঠাৎ চোখে পড়ে এক অচেনা মেয়েকে—চুলে সাদা ফিতা, হাতে জলভরা কলসি। মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, “এই পুকুরে সবাই গোসল করে?” বিনয় কিছু বলতে পারে না, শুধু চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। মেয়েটির নাম সুমনা সরকার —শহর থেকে বদলি হয়ে আসা বাবার সঙ্গে নতুন বাসা নিয়েছে নগর খাঁনপুরে। সেদিন থেকেই প্রতিদিন দেখা, গল্প, আর এক মধুর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে পুকুরপাড়ে। কিন্তু সুখ চিরকাল থাকে না। হঠাৎ একদিন সুমনা জানায়—তাদের আবার শহরে ফিরে যেতে হবে। শেষ বিকেলে পুকুরপাড়ে সুমনা বসে থাকে, চুপচাপ। বিনয় কাঁপা হাতে দেয় একটি কাঠের পেনসি...

আমি আছি সবার মাঝে

ছবি
আমি আছি সবার মাঝে আমি আছি সবার মাঝে। সকালবেলায় যখন শহর ঘুম ঘুম চোখ মেলে, আমি হাঁটি মানুষের মুখের ভিড়ে। সন্ধ্যায় যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরে, আমি দাঁড়িয়ে থাকি সেইসব মুখগুলোর পাশে— যাদের ঘরে আলো জ্বলে না, যারা ভালোবাসা বোঝে, অথচ ভালোবাসা পায় না। আমি দল বুঝি না, জাত বুঝি না, আমি শুধু মানুষ বুঝি। আমি কারও ধর্ম দেখি না, দেখি তার চোখে থাকা অশ্রু। আমি কারও পরিচয় জিজ্ঞেস করি না, জিজ্ঞেস করি— ‘তোমার কিছু লাগবে?’ দুঃখ পাই যখন কারো কান্না শুনি। মনে হয় যদি পারতাম, সেই কান্নাকে মুছে দিতে। অর্থ নেই হাতে, কিন্তু থাকলে আমি এক মুহূর্ত দেরি করতাম না। আমি দিতে চাইতাম, খোলা হাতে— আশ্রয়হীনকে আশ্রয়, ক্ষুধার্তকে খাদ্য, ক্লান্ত পথিককে একটু পানি, বৃদ্ধকে একটু সাহচর্য। কেউ যখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার ধারে, আমি বুঝি, সে কোনো কিছু বলার অপেক্ষায় আছে। একটা ভালোবাসার শব্দ, একটা নির্ভরতার স্পর্শ— অনেক সময় সেটাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আমি চাই না বিখ্যাত হতে, চাই না বড় কিছু হত...

মা নাই যার, সংসার অরণ্য তার

ছবি
মা নাই যার সংসার অরণ্য তার — নোয়াখালীর মাহাতাবপুরের মায়ের স্মরণে মা ছিল আমার, এক মাটির প্রতিমা, নোয়াখালীর মাহাতাবপুর, বজরার কাছে ছিল তার ভূমিকা। চৌমুহনী থানার প্রান্তে, শান্ত এক হিন্দু পরিবারে, ছয় সন্তানের জননী হয়ে, আলো জ্বেলেছিলেন ঘরে ঘরে। তার কপালের সিঁদুর যেন ছিল সূর্যোদয়ের প্রতিচ্ছবি, তার আঁচলে ছিল গন্ধ, ধানভাঙা বিকেলের ছবি। তিনি ছিলেন ঘরের শ্রুতি, প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি, জীবনের কষ্টকে ঢেকে রাখতেন মায়াবী ভালবাসায় ভাসি। ভোরে উঠেই হাঁড়িতে চড়াতেন ভাত, শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে দিতেন গায়ে হাত। ঈশান কোণে প্রদীপ জ্বলত, তারই প্রার্থনায়, আমার ছোট ছোট দুঃখগুলো গলে যেত মায়ের ছায়ায়। আজ তিনি নেই... ঘরের উঠোনে আর তার পায়ের চিহ্ন পড়ে না, ভাতের হাঁড়িতে তার হাতের গন্ধ আর জাগে না। আলো জ্বালানো সেই চোখজোড়া এখন নিভে গেছে, শুধু স্মৃতির ঝর্নাধারায় মন আমার ভেসে চলে, ক্লান্ত, অনিশ্চিত পথ বেয়ে। দরজায় আজো কাঁপে হাওয়া, কিন্তু সে তো মায়ের নয়, দেয়ালে আজো ঝোলে ছবিখানি, নিঃশব্দে কেবল কাঁদে অশ্রু-ঢেউয়ে। তার ডাকা নামে কেউ আর ডাকেন...

বিষ টাকার পথে: বীরপাড়া থেকে ভুটান ফুন্টলসিং

ছবি
বিশ টাকার পথে: বীরপাড়া থেকে ভুটান ফুন্টসলিং ১৯৯৩ সাল। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় একদিন আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে পা বাড়াই ভারতের পথে। আমাদের যাত্রার সূচনা বেনাপোল বর্ডার পেরিয়ে বনগাঁ শহরে। দিনটি ছিল বিশেষ—বাংলা বছরের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ, ১৪০০ বঙ্গাব্দ । আমরা ছিলাম চারজন—আমি, আমার বন্ধু, আর তার দুই বোন। বনগাঁ থেকে রাত দশটার ট্রেনে চড়ে দমদমে পৌঁছাই প্রায় রাত বারোটায়। সেখান থেকে সরাসরি বন্ধুর আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে রাত কাটাই। পরদিন খুব ভোরে রওনা হলাম শিয়ালদা হয়ে বন্ধুর বাড়ি। কয়েক সপ্তাহ পর বুঝলাম, সেখানে আমার আশার আলো নেই। সিদ্ধান্ত নিলাম—যেতে হবে উত্তরবঙ্গের বীরপাড়ায়, বড় দিদির বাড়িতে। বীরপাড়া, জলপাইগুড়ি জেলার ছোট্ট একটি শহর। একসময় এই এলাকা ছিল চা-বাগানে ঘেরা। ধীরে ধীরে বাজার, মহল্লা, আর ঘন বসতির গড়ে ওঠা—সবই চা-বাগানের জমিতে। আমার বড় দিদির বাড়ি ছিল রবীন্দ্র নগর কলোনিতে । দিদি আমাকে চিনতে পারেননি প্রথমে। কারণ তার বিয়ের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। ১৯৬৪ সালে দিদি ও জামাইবাবু ভারতে চলে যান এবং আর কখনো দেশে ফেরেননি। প্রায় ৩০ বছর পর সেই দিদির বাড়ি গিয়ে পরিচয় ...

স্বাধীনতা-পরবর্তী: নোয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জ

ছবি
   স্বাধীনতা-পরবর্তী: নোয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জ — এক জীবন্ত দলিল ✍️ নিতাই বাবু) (জন্ম: ৮ জুন ১৯৬৩, মাহাতাবপুর, নোয়াখালী | বর্তমান নিবাস: নারায়ণগঞ্জ) 🌾 মাহাতাবপুর: আমার শৈশবের স্বর্গভূমি আমার জন্ম ১৯৬৩ সালের ৮ই জুন, নোয়াখালীর চৌমুহনী থানার অন্তর্গত বজরা রেলস্টেশনের পাশের গ্রাম মাহাতাবপুরে। আমাদের পরিবার ছিল গ্রামের মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত হিন্দু পরিবার। আমার শৈশব যেন ছিল এক নির্মল সময়ের রঙিন ক্যানভাস — ট্রেনের হুইসেল, পাশের খালের জেলেদের মাছ ধরা, আম-কাঁঠালের বাগানে খেলাধুলা, আর সন্ধ্যায় হারিকেনের আলোয় গল্পে মেতে ওঠা। 🔥 একাত্তরের আগুনে আমাদের উঠোন ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আমার জ্যাঠা ছিলেন পাকিস্তান আমলে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করা একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বে আমাদের বাড়ি হয়ে ওঠে মুক্তিবাহিনীর এক গোপন ঘাঁটি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা এসে জড়ো হতেন, আমার জ্যাঠার সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করতেন। অস্ত্রও আনা হতো গোপনে। শিশুরা দূরে থাকত, তবু টের পাওয়া যেত সবকিছু। ⚔️ স্বাধীনতা, কিন্তু শান্তি ন...