পরিচয়হীন এক সোহেলের দিনলিপি
পরিচয়হীন এক সোহেলের দিনলিপি
— এক আত্মসমীক্ষার গল্প
আজ ২৯শে জুন, বিকেল ৫টা।
ঘড়ির কাঁটা নড়ছে, কিন্তু সময় আমার মধ্যে যেন থেমে আছে। জানালার ওপারে শিশিরভেজা ছাদ, একফোঁটা আলোও নেই আমার ঘরে।
জানালা দিয়ে ঢুকছে কেবল শীতল হাওয়া আর পুরনো স্মৃতির গন্ধ।
আমি সোহেল। তবে নামটা কেউ ডাকে না। প্রয়োজন ফুরালেই সবাই ভুলে যায়। তাই আজকাল নিজেকেও মনে হয় নামহীন এক মানুষ।
একটা সময় ছিল, যখন ভাবতাম—জীবনে কিছু একটা হবো। কেউ একজন বলবে, “এই যে সোহেল ভাই, আপনার জন্যই তো এত কিছু সম্ভব হয়েছে।”
কিন্তু না। কেউ বলে না। হয়তো বলার কথাও না। আমি নিজেও তো নিজেকে কিছু বানাতে পারিনি।
একটা ছোট চাকরি করতাম—তিন রুমের একটা অফিস, ছোট ডেস্ক, ক্যাশবই আর এক রাগী বস। টিকটিকির মতো সারা দিন দেয়ালে ঝুলে থাকতাম, বিকেল হতেই বাসার দিকে হাঁটতাম হেঁটে হেঁটে।
তাও সেই চাকরিটা হারালাম। কারণ? সৎ ছিলাম।
এরপর দিন গেছে। বাড়িভাড়া, বাজার, ঋণ, স্ত্রীর অনুযোগ আর ছেলের পড়াশোনার খরচ—সবকিছুর নিচে পিষ্ট হতে হতে আমি বুঝলাম—আমি আর মানুষ নই, আমি কেবল একটা খরচের খাতা।
বাড়ির কেউ আর আমার সঙ্গে বেশি কথা বলে না। তারা জানে, আমার কথার ওজন নেই। পকেট খালি মানুষের মুখের দাম থাকে না এ যুগে।
আজ সকালে আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম—চোখের নিচে কালি, গালের ভাঁজ, চুলে পাক। তবু ভিতরে যেন এখনো একটা ক্ষীণ আগুন জ্বলছে। যা আমাকে এই দিনলিপি লিখতে বাধ্য করছে।
আমার ব্যর্থতা কেউ জানে না, বুঝতেও চায় না। কারণ ব্যর্থ মানুষদের কথা কেউ শোনে না। তবে এই ডায়েরি... হয়তো একদিন কেউ পড়বে, হয়তো জানবে—এই শহরে, এই পৃথিবীতে এক সময় একজন “সোহেল” ছিল, যে কিছুই হতে পারেনি, তবুও প্রতিদিন হেরে গিয়েও বাঁচতে চেয়েছিল।
— পরিচয়হীন সোহেল
✍️ লেখক পরিচিতি:
নিতাই বাবু — জীবনের ছায়াঘেরা প্রান্তগুলোতে দাঁড়িয়ে তিনি লেখেন হৃদয়ছোঁয়া শব্দে। তার কলমে উঠে আসে পরিচয়হীন মানুষের পরিচয়, সমাজের অদেখা আড়াল, আর একান্ত অনুভবের কান্না।
প্রিয় পাঠক, এই লেখাটি যদি আপনার মন ছুঁয়ে যায়, তাহলে অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
🔗 মূল লেখাটি পড়ুন: nitaibabublog.blogspot.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com