ব্যর্থ জীবনের গল্প
গল্প: ব্যর্থ জীবন
বিকেলটা ছিল অদ্ভুত রকমের নীরব।
সূর্যটা ছিল যেন একটু তাড়াহুড়োয়,
নরম আলোটা ঘরের মেঝেতে হেলে পড়ছিল ধীরে ধীরে।
সোহেল উদাস চোখে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল।
বাড়ির পাশের পুরনো আমগাছটার পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলো এসে পড়ছে তার মুখে,
আর তাতেই যেন বেদনার রংটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
৬৩ বছর বয়স—
এই জীবনে কী পেল সে?
একটা চাকরি ছিল, তাও মাঝখানেই ছেড়ে দিতে হয়েছিল পারিবারিক চাপে।
ব্যবসা শুরু করেছিল—হঠাৎ এক বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করল।
স্ত্রীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল,
আজ সেই স্ত্রী-ই যেন প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়—
সে ব্যর্থ।
সোহেল ধীরে ধীরে উঠলো, চুপচাপ আয়নার সামনে দাঁড়ালো।
চুলে পাক ধরেছে অনেক আগেই,
চোখে কালি, মুখে গাঢ় ক্লান্তি।
নিজেকে দেখে তার মনে হলো,
“এই আমি কি সেই সোহেল,
যে একদিন স্বপ্ন দেখত—জীবনের রং পাল্টে দেবে?”
সে জানালার পাশে বসে গেল।
পিঠে একটা পুরনো চাদর জড়িয়ে, এক কাপ কড়া লাল চা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো—
“কেন এসেছিলাম এই পৃথিবীতে?”
“শুধু ব্যর্থতা দেখার জন্য?”
স্মৃতিগুলো একে একে ভিড় করতে লাগল মাথায়।
স্কুলে প্রথম প্রেম, বাবার মৃত্যুর পর রাত জেগে মায়ের পাশে বসে থাকা,
সন্তানের মুখে প্রথম ‘আব্বু’ ডাক,
বন্ধুর সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া...
এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কি সত্যিই মূল্যহীন?
তবুও, সমাজ তাকে ব্যর্থ বলবে।
কারণ তার নিজের বাড়ি নেই,
গাড়ি নেই, ব্যাংক ব্যালান্স নেই।
আছে শুধু কিছু অসমাপ্ত কবিতা, কিছু মুছে যাওয়া স্বপ্ন, আর বুকভরা হাহাকার।
রাতে ছেলের ফোন এলো—
“আব্বু, আজ তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল। জানো, আমি তোমার মতই কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি... তবুও সাহস হারাচ্ছি না। কারণ, তুমি আমাদের শিখিয়েছ—ভালোবাসা কখনো হারায় না।”
সোহেলের চোখ ভিজে উঠলো।
সে জানত না, তার ব্যর্থতার ভিতরেও কেউ একজন খুঁজে পায় অনুপ্রেরণা।
চোখ মুছে সোহেল মনে মনে বলল—
“হয়তো সমাজের চোখে আমি ব্যর্থ,
কিন্তু আমার সন্তান, আমার লেখা, আমার সত্য,
এগুলোই আমার আসল পরিচয়।
আমার ব্যর্থতাই হয়তো কারও আশার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সেই রাতে সোহেল অনেকদিন পর শান্তিতে ঘুমাল।
✍️ লেখক: নিতাই বাবু — একজন ব্লগার, যিনি জীবনের গভীর দিক, সমাজ ও আত্মজিজ্ঞাসা নিয়ে লেখেন।
📢 পাঠকদের প্রতি অনুরোধ: গল্পটি কেমন লাগলো, কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করুন।
🔗 আমার আরও ব্লগ: জীবনের ঘটনা:
🔗 আমার আরও ব্লগ: চ্যাটজিপিটি ভাবনা:
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com