বৌলতলির হাটের দিন
ভূমিকা:
বাংলার গ্রামীণ জীবনের নান্দনিক রূপ ফুটে ওঠে তার হাটবাজারে, যেখানে শুধু বাণিজ্য নয়—প্রকাশ পায় জীবন, সম্পর্ক ও সংগ্রামের গল্প। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কুমার নদীর তীরে অবস্থিত বৌলতলি বাজার এমনই এক প্রাণময় আবহ তৈরি করে সপ্তাহে দু’দিন—সোমবার ও শুক্রবার। বাঁশ, কাঠ, মাছ, চাল, শাকসবজির পাশাপাশি এখানে বিক্রি হয় নারীর ঘাম, পরিবারের স্বপ্ন আর গ্রামের স্বাবলম্বিতা।
এই বাজার শুধু পণ্য নয়, তুলে ধরে এক সামাজিক রূপান্তরের চিত্র, যেখানে গ্রামের নারী এখন শুধু গৃহস্থালির গণ্ডিতে আবদ্ধ নন—তিনি বিক্রেতা, উদ্যোগতা ও পরিবার রক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কুমার নদী যেন সাক্ষী হয়ে থাকে এই সবজীবনের।
বৌলতলির হাটের দিন
বৌলতলির হাটে আজ উঠেছে ভোর,
কুমার নদীর ঢেউ বলে — "এসো গোর!"
নৌকায় মাল, বাঁশের ছাউনির ঘর,
গ্রামের মাটি জাগে, বাজে জীবন সুর।
সোম ও শুক্রবার — দুই দিনের ডাক,
হাট বসে যেন প্রাণের আলোক,
বউ-ঝিরা সব আজ দোকানদার,
তাঁদের মুখে হাসি, হাতে সংসার।
বাঁশ কেটে সাজায় নতুন গৃহপথ,
চালের বস্তা, পিঁয়াজ, মাছের গন্ধ,
লাল-নীল চটের নিচে পণ্য সাজানো,
মাটির নিচে ব্যস্ত হাত — স্বপ্ন বুনানো।
বৌলতলি বাসস্ট্যান্ড চুপচাপ শোনে,
মাটির কান্না আর হাসির সমঝোতায় ভোলে,
নদী জানে সব — হাটের গল্প,
নৌকার ছইয়ের নিচে ঢেকে রাখা ছন্দ।
গ্রামের নারী আজ শুধু গৃহবধূ নয়,
হাটে সে ব্যবসা করে, স্বপ্নের বই,
ছেলের স্কুল ফিস, স্বামীর ওষুধ —
সব হিসেব সে জানে, সে আজ দুর্বার শক্তির সূচ।
কোনো কবির দরকার নেই যদি তুমি যাও,
এক হাট দিনে — কুমার নদীর বাঁও,
তবেই দেখবে — বৌলতলি হাট
কতটা নিখাদ, কতটা প্রিয়, কতটা মাটির ঘাট।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com