আমার ছোটবেলা
আমার ছোটবেলা
আমার ছোটবেলা খুব সাদামাটা, খুব চুপচাপ। তাতে ছিল না দামি খেলনা, না ছিল চকচকে জামা। তবে ছিল রোদ, ছিল ধুলা, ছিল ঘামের গন্ধ মাখা একটা জীবন্ত জীবন।
ভোরবেলায় মায়ের ডাকে উঠত ঘুম। "তাড়াতাড়ি ওঠ, বাজারে যেতে হবে, বই কিনতে পারবি না তাহলে!" আমি ঘুমচোখে ভাবতাম, বই না কিনলে কী হবে? কিন্তু পরে বুঝেছি, একটা বই মানে একটা দরজা— যে দরজা দিয়ে আমি আমার দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে স্বপ্নের দিকে হেঁটে যেতাম।
স্কুলে যেতাম ছেঁড়া ব্যাগ আর পায়ে ছেড়া চপ্পল নিয়ে। বন্ধুরা পেছনে তাকিয়ে হাসত—তাদের হেসে ফেলতে দোষ নেই, কারণ তারা জানত না, আমি বাদামও বেচি, আবার অঙ্কও কষি। তারা দেখত কেবল বাদামের ঝুড়ি, আমি দেখতাম তার ভেতরে লুকানো বইয়ের টাকা।
অনেক দিন স্কুলের পেছনের বেঞ্চে বসেছি, তবু কখনও পড়া ছেড়ে দিইনি। যেদিন খাতার পাতা শেষ হয়ে যেত, সেদিন রাস্তার মোড়ে আরও একটু বেশি হাঁটতাম। একটা বাদাম বেশি বিক্রি মানে, একটা পৃষ্ঠা বাঁচানো যায়।
ছুটির দিনে যখন অন্যরা খেলত ক্রিকেট, আমি গুনতাম কয়টা বাদাম বাকি আছে ঝুড়িতে। তবু মন খারাপ করিনি, কারণ জানতাম—একদিন এ বাদামই হবে আমার কলম, আর রাস্তাটাই হবে আমার গল্পের বই।
আমার ছোটবেলা আমাকে শিখিয়েছে— অভাব মানেই অসহায় নয়, কষ্ট মানেই ব্যর্থতা নয়, বরং প্রতিটা কষ্টের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একেকটা শক্তি।
আজ যখন কেউ বলে “তুমি ভালো লেখো”, আমি মুচকি হাসি। কারণ তারা জানে না, কত কষ্ট আর কত বাদামের গন্ধ মিশে আছে আমার শব্দে।
নিতাই বাবু একজন সাহিত্যপ্রেমী, ব্লগার এবং কথাশিল্পী, যিনি বাংলা ভাষার গভীরে ডুবে গিয়ে লিখে চলেছেন জীবনের কথা, সমাজের কথা। তাঁর কবিতায় উঠে আসে আত্মজিজ্ঞাসা, নিঃসঙ্গতা, শৈশবের ক্ষত এবং মানুষের অভ্যন্তরের অন্ধকার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
nitaibabunitaibabu@gmail.com