বাঁশ গাছকে বাদ বিয়ে জাতীয় বৃক্ষ খেতাব দেয়া হলো আম গাছকে

          ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ। 

আপনাদের কি কারোর মনে আছে, এই বঙ্গদেশে কবে ঘূর্নিঝড় ফণী আঘাত হেনেছিল? হ্যাঁ, আমার বেশ মনে আছে! ঘূর্নিঝড় ফণী এই বঙ্গদেশে আঘাত হেনেছিল ২০১৯ ইং খ্রীস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। সেদিন আমি আমার বাসার সামনে থাকা চায়ের দোকানে বসে ছিলাম চা পান করার জন্য।  এমন সময় শুরু হলো, ঘূর্নিঝড় ফণী'র আক্রমণ। সেসময় ছিলো আমের সৃজন। গাছে-গাছে ঝুলে আছে আম। এলাকার ছোটছোট ছেলে-মেয়েরা ওই ঘূর্নি ঝড়ের তীব্র বাতাস উপেক্ষা করে আম কুড়ানোর জন্য আমগাছের নিচে ঘুরঘুর করছিল। বাতাসও তীব্র বেগে বয়ে যাচ্ছিল!

সেদিন ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণীর তীব্র বাতেসে একটা আমগাছ থেকে আম ঝরে পরছিল। সেই আম কুড়িয়ে নিচ্ছিল এলাকার কিছু ছেলে-পেলে। সেই দৃশ্য দেখে আমি নিজেই হারিয়ে গেলাম আমার সেই ছোটবেলার স্মৃতিতে। একসময় আমের সৃজনে আমিও এরকমভাবে আম কুড়িয়েছি। এ নিয়ে কত বকুনিও শুনেছি। তবুও তুফান বৃষ্টির দিনে কেউ ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি। আমের সৃজনে আকাশে কালো মেঘ দেখলেই আমগাছের নিচে  গিয়ে চুপ করে বসে থাকতাম।ঘূর্নিঝড় ফণীর দিনে ছেলেটার আম কুড়ানো দেখে আমার মনের টেলিভিশনের পর্দায় যেন সেইদিনের স্মৃতি ভেসে উঠলো। সাথে ছিল মোবাইল ফোন। মোবাইলে ছিল 4G ইন্টারনেট সংযোগ। ওমনি গুগলে আমগাছ লিখে সার্চ দিতেই দেখি আমাদের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃত পায়, এই আমগাছ। যা ২০১০ সালে মন্ত্রীসভায় আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে অনুমোদন দেয়। 
           ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ। 

বিস্তারিত খবর পড়ে ভাবতে লাগলাম! যেই বাঁশগাছ আমাদের সাথে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মিশে আছে, সেই গাছকেই তো জাতীয় খেতাব দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু এই বাঁশ গাছকে বাদ দিয়ে কেন-যে জাতীয় বৃক্ষ খেতাব  আম গাছকে দেওয়া হলো, তা কিছুতেই নিজের বুঝে আসছিল না। এখনো বুঝে আসে না। তাই বাঁশ গাছের জন্য শুধু আফসোসই করতে হচ্ছে! কারণ, এই পৃথিবীতে যতসব গাছ আছে, তারমধ্যে মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী গাছ হলো এই বাঁশ। বাঁশের চাহিদা থাকে আমাদের কাছে প্রতিদিনের। আমগাছ থেকে আমরা শুধু বছরে একবার মৌসুমি ফল পেয়ে থাকি। আর কাঠ-খড়ি দিয়ে আসবাবপত্র ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। যদিও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা সহ আম গাছের ফল আমাদের নানারকম খাবারের প্রয়োজন মেটায়। তবুও বাঁশ গাছের সমতুল্য অবদান আমগাছ থেকে আমরা কখনওই পাবো না বলে মনে হয়।

আর বাঁশ দিয়ে এই দুনিয়ার মানবজাতি কতরকমের কাজ করে থাকে, তা আর লিখে শেশ করা যাবে না। তবু সবাইকে একটু মনে করিয়ে দেওয়া যায়। বাঁশ দিয়ে আমরা ঘর তৈরি করি। তা হোক চৌচালা ঘর, নাহয় হোক সেটা কুঁড়েঘর। বাঁশের খুঁটি দিয়ে বানানো ঘরে অগণিত মানব সন্তান মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। কেউ যদি বলে, “বড়লোকের সন্তানেরা ভূমিষ্ঠ হয় বড়সড় বিল্ডিঙে।" তাহলে বলবো, “এই বিল্ডিংও কিন্তু একসময় বাঁশের সাহায্যে দাঁড় করিয়েছিল। বাঁশ ছাড়া বিল্ডিং তৈরি করতে পারেনি বা পারবেও না।" 

আবার আমরা কেউ মৃত্যুবরণ করলে প্রথমেই প্রয়োজন হয় বাঁশের। সে যেই ধর্মেরই হোক-না-কেন, বাঁশ ছাড়া আর উপায় নেই! বাঁশ ছাড়া কি আর লাশ কবর দেওয়া যায়? বাঁশ ছাড়া কি শ্মশানের কার্যসম্পাদন করা যায়? কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাঁর কবরে বাঁশে পরিবর্তে কি লোহার এঙ্গেল দেওয়া যায়? মনে হয় দেওয়া যায় না! তাহলে এতেই বুঝা যায় যে, বাঁশগাছ বা বাঁশ আমাদের জন্য কতো উপকারী একটা গাছ!

আবার চীন দেশে নাকি বাঁশ হলো তাঁদের শান্তির প্রতীক। বাঁশ ছাড়া তাঁদের মোটেই চলে না। আমাদেরও চলে না। বাঁশ আমাদের নানাভাবে নানারকম সাহায্য সহযোগিতা করছে। যেমন– বাঁশ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে। কচি বাঁশের সবুজ রং নাকি দৃষ্টিশক্তি সতেজ রাখে। বিভিন্ন দেশ-সহ আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরাও কচি বাঁশ রান্না করে খায়। তাছাড়া আমাদের চারপাশে থাকা অন্যান্য গাছের মতো বাঁশও অক্সিজেন ত্যাগ করে বাতাস শুদ্ধ করে। একসময় বাঁশগাছে ফুল আসে, ফল ধরে। লোকে বলে, “সেই বাঁশ ফল নাকি সৌভাগ্যের প্রতীক। যেই গৃহস্থের বাঁশঝাড়ে থাকা বাঁশ গাছে ফল ধরবে, সেই গৃহস্থের নাকি সাতকপাল।" বাঁশগাছ আমাদের জীবনের সাথে কিন্তু  একরকম  অঙ্গাঙ্গীভাবেই মেশা। বাঁশ ছাড়া আমাদের কোনও কাজই শেষ হয় না। 

এছাড়াও বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে বাঁশ দিয়ে প্লাইবোর্ড, পার্টিকেল বোর্ড, সিমেন্ট বন্ডেড পার্টিকেল বোর্ডসহ গৃহস্থালির আসবাবপত্র তৈরি করা হচ্ছে। জানা যায়, বিশ্বে প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মূলি, মিতিয়া, ছড়ি, আইক্কা, বাইজা, বররা, মাকাল, বড়বাঁশা, মাতলা তল্ল্যা, উড়া, কাঞ্চন, মুলাই, করমজাসহ প্রায় ২৬ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। এসব বাঁশ দিয়ে শুধু ঘরবাড়িই তৈরি হয় না, বাঁশের প্রকারভেদে বিভিন্নরকম কাজ করা হয়। এরমধ্যে একটি হলো আমাদের লেখার কাগজ। যেই কাগজে লিখে পড়ে পৃথিবীর অগণিত মানবসন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লেখক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, বিজ্ঞানীর খেতাব পেয়েছে বা পাচ্ছে। অথচ জাতীয় খেতাব দেওয়ার সময় বাঁশ গাছের কথা কেউ মনে না রেখে, আমগাছকে দিয়ে দিলো জাতীয় বৃক্ষ খেতাব। তাই আফসোস লাগে, দুঃখও থেকে যায়! আপনাদের কী মনে হয়?

প্রিয় পাঠক, লেখা পড়ে ভালো লাগলে দয়াপূর্বক 
লাইক/কমেন্ট ও শেয়ার করে বাধিত করবেন। 

নাগরিক সাংবাদিক ও ব্লগার,
ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম,
০৪/০৫/২০২৩ইং।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার শৈশবের বন্ধু— শীতলক্ষ্যা

একটি মাঠ; হাজারো প্রাণের স্মৃতি

মা নাই যার, সংসার অরণ্য তার