ঘরে বাইরে চলছে ক্রিকেট জুয়া
ক্রিকেটের আড়ালে সর্বনাশা জুয়া
বর্তমানে হাতে হাতে স্মার্টফোন! ঘরে ঘরে রঙিন টেলিভিশনের ছড়াছড়ি। সাথে পাচ্ছে সীমিত মূল্যে 4G ইন্টারনেট সেবা এবং ওয়াইফাই। দেশের আনাচে-কানাচে, হাট-বাজারে, অলি-গলির প্রতিটি দোকানে চলছে টিভি চ্যানেলে ক্রিকেট খেলা।
এই জনপ্রিয় খেলার ভেতরে চলছে আরেক ভয়াবহ খেলা — মরণঘাতী গুপ্ত জুয়া। ক্রিকেটের মাঠে উইকেট খেলে না, খেলে খেলোয়াড়রা। আর মাঠের বাইরের অনেক ভক্ত এই খেলার নামে খেলছে সর্বনাশা জুয়া।
আমার ক্রিকেট স্মৃতি
❝সময়টা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৪-১৯৭৫ সাল। আমরা তখন টেনিস বল দিয়ে ব্যাটবল খেলতাম। বল না থাকলে ছেঁড়া কাপড় মুড়িয়ে বানাতাম বল। স্টাম্প বানাতাম গাছের ডালা বা ইট সাজিয়ে। ব্যাট হিসেবে থাকত কাঠের তক্তা। বল করতাম গড়িয়ে।❞
খেলোয়াড় বলেই জানতাম সবাইকে। উইকেট বা ব্যাটসম্যান শব্দ তখন অজানা। আজ সেই ব্যাটবল হয়ে গেছে জাতীয় ক্রিকেট খেলা, যা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য এক গৌরব।
জাতীয় ক্রিকেট ও তার উত্থান:
ক্রিকেটের জন্ম ষোড়শ শতকে হলেও প্রথম টেস্ট খেলা শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে, রকিবুল হাসানের নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। বিশ্বকাপে প্রথম খেলে ১৯৯৯ সালে।
গুপ্ত ক্রিকেট জুয়া:
আজকের দিনে ক্রিকেট ম্যাচ মানেই বাজির উৎসব। খেলোয়াড়রা মাঠে দেশের জন্য লড়ছে আর বাইরে অগণিত মানুষ খেলছে টাকার খেলা—নগদনারায়ণের বাজি।
যেখানে তাসের খেলাও কোনোদিন জানতো না, সেখানেও আজ জুয়া চলছে। ধনী-গরিব সবাই এই জুয়ার নেশায় আসক্ত। কেউ সর্বস্ব হারাচ্ছে, কেউ জেতার আনন্দে ভেসে যাচ্ছে।
জুয়ার ছড়িয়ে পড়া রূপ:
- পাড়া-মহল্লা: দোকানে দোকানে টিভি, সামনে লোক দেখানো চা কেতলি আর পেছনে জুয়া। জমাদার কমিশন, ভাগবাটোয়ারা, এবং গোপন লেনদেন।
- রিকশাচালকদের জুয়া: দিনে রোজগার, রাতে বাজি। কেউ কেউ রিকশা পর্যন্ত বিক্রি করে ফেলে।
- সাধারণ দোকান ও মার্কেট: বড় টিভি স্ক্রিনে ভিড়, কিন্তু বেশিরভাগ দর্শক দর্শক নয়, জুয়াড়ি।
- ঘরোয়া জুয়া: ভাইয়ের সাথে ভাই, আত্মীয়ের সাথে বাজি। ঘরে ঘরে হচ্ছে ঘরোয়া জুয়া।
- টোকাইদের জুয়া: পুঁজি নেই, তবু জুয়া আছে। রাস্তার পাশে টিভি স্ক্রিনে চোখ, বাজির অপেক্ষা।
- মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন জুয়া: মোবাইলেই বাজির জগত। অ্যাপে খেলার আপডেট আর বাজির হিসাব।
- কথায় কথায় বাজি: চায়ের দোকানে বলার আগে বাজি, "চার হবে না ছয়?" না হলে ড্র!
পরিশেষে
এইভাবে চলতে থাকলে ক্রিকেটের নামেই দেশের সমাজে জুয়া, চুরি, ছিনতাই, এবং অপরাধমূলক প্রবণতা বাড়বে। ছাত্র-যুবক থেকে কিশোর পর্যন্ত ডুবে যেতে পারে এই সর্বনাশায়।
সরকারের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা। প্রতিদিনের খেলা সম্প্রচারে বিধিনিষেধ, বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন করে তৎপরতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
আমরা চাই, ক্রিকেট হোক বিনোদনের মাধ্যম—জুয়া নয়।
জাতীয় দল বিজয়ী হোক দেশের জন্য, না যে জুয়ার জন্য! এটাই আমাদের সকলের কামনা।
প্রিয় পাঠক, লেখা পড়ে ভালো লাগলে দয়াপূর্বক লাইক/কমেন্ট ও শেয়ার করে বাধিত করবেন।
- নিতাই বাবু
✍ লেখক পরিচিতি
নিতাই চন্দ্র পাল (নিতাই বাবু) একজন সমাজ সচেতন লেখক, সাহিত্যপ্রেমী, এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্লগার। তিনি bdnews24.com-এর ব্লগ প্ল্যাটফর্মে ‘নিতাই বাবু’ নামে নিয়মিত লিখে থাকেন।
তার লেখার প্রধান বিষয়বস্তু বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, নারায়ণগঞ্জ শহর, শীতলক্ষ্যা নদী, গ্রামীণ জীবন, এবং দেশীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য। তিনি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং আঞ্চলিক শব্দভাণ্ডার সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
নিতাই বাবুর লেখায় থাকে বাস্তবতা, সচেতনতা, এবং একজন নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গি। পাঠকদের ভাবায়, জাগায় এবং প্রশ্ন করতে শেখায়।
📘 ফেসবুক: facebook.com/nitai.babu.writer
🌐 ব্লগ: bangla.bdnews24.com/blog/nitaibabu
✉ যোগাযোগ: nitaibabunitaibabu@email.com
call likhwchen
উত্তরমুছুনধন্যবাদ দাদা
মুছুন