স্বপ্নের চাঁদের দেশে

চাঁদের দেশে কাটা সুতা কিনতে গিয়েছিলাম!

বর্তমানে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল মিলের সুতার টুকরা, ছেঁড়া কাপড়, সুতার কুণ্ডলী, কার্টনের জন্য অনেক স্থানে যেভাবে দলাদলি, মারামারি, খুনোখুনি হয়—তা দেখে মনে মনে ভাবি, ইশ! যদি চাঁদের দেশে যেতে পারতাম! তাহলে চাঁদের বুড়ির যুগ যুগ ধরে কাটা সুতাগুলো এনে আমাদের দেশের জুট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারতাম!

এরকম ভাবনা নিয়ে একদিন রাতের বেলা লেখালেখি বাদ দিয়ে চাঁদে যাওয়া নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখি, ঠিকই চাঁদের দেশে চলে গেছি! চাঁদের দেশে গিয়ে রোবট সাজে রকেট থেকে নেমে যখন চাঁদের বুড়ির সামনে গেলাম, তখন চাঁদের বুড়ি তেড়ে এসে আমার দুই গালে ঠাস-ঠাস করে দুটো থাপ্পড় মেরে জিজ্ঞাসা করলো—

“তুই না গরিব দেশের গরিব মানুষ? গরিব হয়েও নাসার মহাকাশ যানে চড়ে পৃথিবী থেকে এখানে আসলি কীভাবে? আর আসলিই বা কেন?”

চাঁদের বুড়ির প্রশ্নের জবাবে আমি দু’কান ধরে চার-পাঁচবার উঠবস করে বললাম—

“বুড়ি মা, আমি তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি। আগে আপনার দুই পা ছুঁয়ে নমস্কার করে নিই, তারপর নাহয় এখানে আসার উদ্দেশ্যটা বলি।”

আমার কথা শুনে চাঁদের বুড়ি বললো—

“নমস্কার লাগবে না। তুই আমাকে ছুঁতেও পারবি না। তোর সাথে নানারকম প্রাণঘাতী জীবাণু ভাইরাস আছে। কিছুদিন আগেও তোরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নাক-মুখ ঢেকে জীবন-যাপন করেছিলি। আমার কাছে খবর আছে—এখনো কোনো না কোনো জায়গায় মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মরছে। তোর সাথেও যে করোনা ভাইরাস নেই, তা কী করে জানা সম্ভব? যদি তোর সাথে ভাইরাস থাকে, তাহলে তো সর্বনাশ! তুই আমাকে ছুঁলে আমিও আক্রান্ত হয়ে পড়ব। আর আক্রান্ত হলে আমার চাঁদের কী হবে? যা বলার অন্তত তিন ফুট দূরে থেকেই বল! বল, তোর এখানে আসার উদ্দেশ্যটা কী?”

আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম—

“বুড়ি মা, আপনি যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। তবে এখন আর আমাদের দেশে সেই 'মেইড ইন চায়না' করোনা ভাইরাস নেই। আমরা টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে সেই গণচীন থেকে উড়ে আসা ভাইরাস মোটামুটি প্রতিহত করেছি। আর যা একটু-আধটু আছে, তা চতুর্থ ডোজ প্রয়োগের মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে প্রতিহত করে ফেলব—এতে কোনো সন্দেহ নেই।”

আমার কথা শুনে চাঁদের বুড়ি বললো—

“আচ্ছা, এটা তাহলে ভালো খবর! এবার এখানে আসার উদ্দেশ্যটা বল তো শুনি।”

আমি বললাম—

“বুড়ি মা, আপনার এখানে আসার উদ্দেশ্য হলো—আপনার কাটা সুতাগুলো পাইকারি দরে কিনে নিতে এসেছি। আমাদের দেশে এসব কাটা সুতার প্রচুর চাহিদা। এসব কাটা সুতার টুকরা থেকে আবার সুতা তৈরি হয়। সেই সুতায় নতুন নতুন নানারকম কাপড় বানানো হয়। তাই এসব কাটা সুতার জন্য সময় সময়ে আমাদের দেশে দলাদলি, মারামারির মতো ঘটনাও ঘটে। এসব দেখে আমি মনে মনে ভাবলাম, চাঁদের দেশে যাই। আপনাদের ফেলে রাখা সুতার পাহাড় কিনে নিয়ে যাই। এতে আপনার কিছু হাত খরচ হবে, আবার আমারও কিছু ব্যবসা হবে।”

এই কথা বলার পরই চাঁদের বুড়ি আমাকে আরেকটা জোরে থাপ্পড় দিয়ে আমার এক কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলো। (সেই থেকে আমি এখন পর্যন্ত শ্রবণশক্তিহীন, মানে, শ্রবণ প্রতিবন্ধী)। তারপর বললো—

“তুই কি বোকা? এখানে কি কোনো সুতা তৈরির ফ্যাক্টরি আছে? আমার কি খেয়ে-দেয়ে আর কাজ নেই? আমি কি বসে বসে শুধু সুতাই কাটব? বোকা কোথাকার!”

আমি বললাম—

“তাহলে বুড়ি মা, আমি তো ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, আপনি একটা বটগাছের নিচে বসে যুগ যুগ ধরে শুধু সুতাই কাটছেন! এটা কি আমি ভুল শুনেছি?”

আমার কথা শেষ হতে না হতেই চাঁদের বুড়ি আমাকে আরেকটা থাপ্পড় মারতে চাইলো। তা দেখে আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। থাপ্পড় আর গালে লাগলো না—তাতে তৃতীয় থাপ্পড় থেকে রক্ষা পেলাম!

তারপর চাঁদের বুড়ি ক্ষিপ্ত হয়ে বললো—

“আমি এখানে আছি চাঁদকে পাহারা দেওয়ার জন্য। যাতে রাহু চাঁদকে গিলে ফেলতে না পারে। আমি হলাম চাঁদের দিদিমা বুড়ি। কোটি কোটি বছর ধরে আমি চাঁদকে পাহারা দিয়ে রাখি। যার কারণে তোরা চাঁদের আলো পাচ্ছিস, চাঁদ নিয়ে উৎসব করছিস। যদি আমি না থাকতাম, তাহলে অনেক আগেই রাহু চাঁদকে গিলে ফেলতো, বুঝলি? যা, এখন এখান থেকে।”

এই বলেই আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে চাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিলো!

আমি সেদিন বায়ুমণ্ডলে যে কতক্ষণ ঘুরেছি, তা বলতে পারব না। হয়তো ঘুরতে ঘুরতে একসময় ঠুস করে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালের ছাদের ওপর গিয়ে পড়েছিলাম। সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিসের মানবিক কর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে আমার বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমি আমার ঘরের ভাঙা খাটের উপরই শুয়ে আছি! তারপর মনে মনে বললাম—"হায় ভগবান! আমি এ কী দেখলাম?"

আর যা দেখলাম তো দেখলামই! কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হলো না—আমার স্বপ্নটাই বিফলে গেল!

নিতাই বাবু 
২৯/০৪/২০২৩ইং।
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার শৈশবের বন্ধু— শীতলক্ষ্যা

একটি মাঠ; হাজারো প্রাণের স্মৃতি

মা নাই যার, সংসার অরণ্য তার